বর্তমান পরিস্থিতিতে পাঠদানের বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করার কথা বলা হচ্ছে। এই পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার আগে নিশ্চিত করতে হবে ফোরজি মোবাইল ফোন ও ফোরজি ডাটা কানেকশন এবং স্বল্পমূল্যে বা সম্ভব হলে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা।
এখন মূল কথায় আসি। সব বিশ্ববিদ্যালয় (মেডিকেল, প্রকৌশল, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাধারণ এবং অন্যান্য) ও কলেজ সমূহের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বর্তমানে সংগত কারণেই গ্রামে অবস্থান করছে। যেখানে ফোরজি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এমনকি থ্রিজি নেটওয়ার্কও কাজ করে না। সাধারণ কথা বলতে হলেও ঘর থেকে বের হয়ে কথা বলতে হয়। অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে প্রথম।
দ্বিতীয় সমস্যা ইন্টারনেট ফি’র ব্যয়বহুলতা। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক পরিবারের সদস্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের আয়ের উপার্জন আগের মত নেই। শিক্ষার্থীরা (স্বাভাবিক পরিবেশে) টিউশন করিয়ে যা উপার্জন করতো তাও এখন বন্ধ আছে। ফলে, অনেক শিক্ষার্থীরই এই ব্যয়বহুল ইন্টারনেট কেনার সক্ষমতা নেই। অনেকের অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারার এটাও একটা বড় কারণ।
অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার বিকল্প নেই। কিন্তু, এইসব সমস্যার সমাধান করে শুরু করতে হবে। একজন শিক্ষার্থীও যদি এই অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমের আওতার বাইরে থাকে তবে তা অবশ্যই শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করা হবে। যা অন্যায় এবং যা কখনই কাম্য হতে পারে না।
কোন একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে অবশ্যই সকলের সুবিধা অসুবিধা জেনে সঠিক উপায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে প্রত্যেকেই উপকৃত হয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ হবেনা, যা কেবল শিক্ষার্থীদের খরচ ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি করবে। যেখানে শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকের আয়-উপার্জন আগের মত নেই।
দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালু করেছে। যেখানে সকল শিক্ষার্থী সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। কেননা, সকলের অর্থনৈতিক সামর্থ্য একরকম নয় এবং সকলেই তাদের আগের বাসস্থানে অবস্থান করছে না। ফলে তারা পড়াশোনার দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
এইসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ সমূহ তাদের অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করেনি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি সহজলভ্য কোন উপায়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে একাডেমিক পাঠ দানের একটি সহজ ও সুলভ পদ্ধতি চালু করুন। যেখানে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শতভাগ উপস্থিত ও মনোযোগী হয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে। খরচ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বেড়ে গেলে জাতীয়ভাবে ক্ষতি বই কোন লাভ নেই। লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে হতাশায় নিমজ্জিত করার অধিকার কারও নেই। এর দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
তাই, অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করার আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি।
[এমএসবি নাজনীন লাকী
ময়মনসিংহ।
ইমেইল: msblucky16@gmail.com]