কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : দেশের করোনা দুর্যোগে নেত্রকোনা জে’লা পুলিশের মানবিক কর্মকান্ড জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জেলার অগণিত অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন, শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, করোনায় মৃতদের লাশ দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নকরণ, কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার মতো কাজ জেলা পুলিশ করছে।
করোনা মোকাবিলায় নেত্রকোনা পুলিশের মানবিক কাজগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী। তার যোগদানের পর থেকে নেত্রকোনায় ‘মানবিক পুলিশ’ শব্দটি গোটা পুলিশ বিভাগকে সম্মানিত করেছে।
প্রত্যন্ত ভাটি এলাকার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নার্সের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তখন পুলিশই তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে।
জীবন বাজি রেখে এমন অসংখ্য কাজ করতে গিয়ে ১৮ জুন পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলা পুলিশের একজন নায়েক শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, কফ ও উচ্চরক্তচাপ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া ওসিসহ মোট ২৯ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেকে সুস্থ হয়ে আবার করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিরেছেন, অনেকেই চিকিৎসাধীন।
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজ এলাকায় আসেন খালিয়াজুরীর ১৭ পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৬০ সদস্য। তাদের নির্জন হাওরের ঝুপড়ি ঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এতে খাবার, পয়োনিষ্কাশন, পানীয় জলের অভাবে তাদের অনেকে অসুস্থ হয়। বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে এলে তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেন। মদন উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের ১২০ সদস্যকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন পুলিশ সুপার নিজে।
এ ছাড়া নিজেদের বেতন ও রেশন থেকে জেলার সব উপজেলায় অসহায়, দুস্থ অন্তত ১ হাজার ২৫০টি পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ ।
এ সব মানবিক কর্মকান্ড সম্পর্কে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, আমরা প্রত্যেকেই জনগণের সেবক। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ছাড়াও যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকে তা মোকাবিলা করাকে আমরা সেবা হিসেবেই নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপসর্গ নিয়ে পুলিশের নায়েক একেএম কামরুজ্জামান মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া পুলিশের আর যেসব সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সদর হাসপাতালে ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জেলা পুলিশ লাইনসে হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।পুলিশ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি মানবিক কাজগুলো করে যাচ্ছে।
এ সময় তিনি জনগণ জানান “নিজে সচেতন হউন, সকলকে ভালো রাখুন”