রবীন্দ্র নাথ পালঃ জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা সদরের পাখিমারা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকারবাড়ী করোনা দূর্যোগে অসহায় দরিদ্রদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত ২৬শে মার্চ থেকে দেশে করোনা আতংকে সব অফিস আদালত,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দিনমজুর,কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে, তখন সরকার বাড়ীর মরহুম আলহাজ্ব মৌলভী মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন এর দেশে বিদেশে অবস্থানরত পরিবারের সন্তানরা এলাকাবাসীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
অনেকটা চুপিসারে সরকারবাড়ীর পরিবারের সদস্যরা দেশ বিদেশ থেকে তাদের আত্মীয়রা টাকা পাঠিয়ে এলাকার ২শত পরিবারের মাঝে চাল,ডাল,তেল,আলু,পেঁয়াজ,লবন,সাবানের প্যাকেট গোপনে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রথম যিনি এগিয়ে আসেন তিনি হলেন,ময়মনসিংহ মুমিনুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও বকশীগঞ্জ খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রী কলেজের ডোনার ফাউন্ডার মমতাজ বেগম লিসা। তার স্বামী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্যাথলজী বিভাগের সাবেক প্রধান ও বর্তমানে এনাম মেডিকেলের উপদেষ্টা ডা: মান্নান সিকদার।
আজকের দিনে বিত্তশালীরা যেখানে দান করেন মানুষ দেখিয়ে, সেখানে তিনি দান করেন গোপনে। তার সাথে পরিবারের অন্য পাঁচ ভাই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন এলাকাবাসীর দূর্যোগের সময়। ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধে কানাডায় যিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলে বর্তমান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্ট্রিন ট্রুডোর পিতা পিয়েরো ট্রুডোর সাথে স্বাক্ষাৎ করেন সেই ড. খাদেমুল ইসলাম, অধ্যাপক নুরুজ্জামান, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক একরামুল ইসলাম, অধ্যাপক রশিদুজ্জামান ও বর্তমানে কানাডার বিট্রিশ কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মতিউল আলম। মরহুম মঈনুদ্দিন ১৯২৮ সনে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। শেরপুরের বাগরাসা হাই স্কুল তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯২১ সনে।
এছাড়াও এলাকায় ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। তার স্ত্রী বিদ্যোৎসাহী খাতেমুন নেছাও ছিলেন স্বামীর মত শিক্ষা প্রসারে বিশেষ করে মহিলা শিক্ষা বিস্তারে তার বিশাল ভুমিকা আজো বকশীগঞ্জ বাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করেন।শেরপুরের বাগরাসা স্কুলের অনেক কৃতি ছাত্রের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী খন্দকার আ: হামিদ, ড.ওয়াদুদ প্রমুখ। বর্তমান করোনা যুদ্ধে কর্মহীন মানুষ বাড়তে থাকায় অধ্যাপক মমতাজ বেগমের অনুপ্রেরনায় শুরু হয় ত্রান কার্যক্রম।
তারই ধারাবাহিকতায় এলাকাবাসীকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন কানাডা প্রবাসী ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.মতিউল আলম।
তার ছোট ছেলে মঈন উল আলম,একরামুল আলম, আহসানুল আলম স্বজন ও অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলের বউ নিশি জাফরিন। স্থানীয়ভাবে তাদের ত্রান কাজে সেচ্ছা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ড. মতিউল আলম সাহেবের নাতিন সরকার রাসেল। আজ করোনা দূর্যোগে দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে।
এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় অপরাধ প্রবনতা বাড়বে- তাতে সন্দেহ নেই। এমনাবস্থায় বিত্তশালী,সুশীল সমাজ ও সমাজের সচেতন মানুষেরা এগিয়ে না এলে সরকারের একার পক্ষে সব কিছু সামাল দেয়া কঠিন হওয়াই স্বাভাবিক । আসুন সবাই মিলে মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষ মানুষের জন্য–জীবন জীবনের জন্য, একটু ভালবাসা কি পেতে পারেনা।এই মন্ত্রে।
লেখকঃ দৈনিক আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও সাবেক নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফ ইউ জে)।