কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (নেত্রকোনা) :
বিশ্বজুড়ে সর্বত্র করোনা ভাইরাস সংক্রমন আতঙ্কে। এরই মধ্যে নেত্রকোনায় একজন সেবিকা সহ এক নারী ও দুজন পুরুষ শ্রমিক কোভিড ১৯ এ শনাক্ত হয়েছেন। পরে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ সদর উপজেলার একটি গ্রাম পুরো লকডাউন করে রেখেছে প্রশাসন। এই অবস্থায় দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার সুযোগ করে দিয়েছে ১০ টাকা কেজি দরে চার ক্রয় করার ব্যবস্থা। এর আগে থেকেও সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচী চালু ছিল।
কিন্তু খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতাও প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ১০ টাকা দরে ভূক্তভোগীদের মাঝে চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বেশ কয়েকজনের অভিযোগ জমা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তাদের অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল তারা নেননি কিন্তু মাষ্টার রোলো তাদের টিপ সহি রয়েছে। এমনও তথ্য জানা গেছে ৯ মাস আগে মৃত ব্যক্তির নামে চাল তোলে নেয়া হয়েছে জাল টিপ সহি দিয়ে। আবার স্থানীয়দের কাছ থেকে আরো তথ্য জানা যায় উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও চালের ডিলার বাজারে তার দোকানে গো খাদ্য ও কীটনাশক জাতীয় বিষাক্ত পণ্যের সাথে চাল মজুদের অভিযোগ। এরইমধ্যে আরেক অভিযোগে আওয়ামীলীগ নেতার ছেলে ডিলার আমিনুর রহমান শাকিলের ৯০ বস্তা চাল ভাঙ্গারী দোকান থেকে জব্দ করেছে পুলিশ। এসব ঘটনাগুলো ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায়।
সোমবার সকালে নাম জানানো শর্তে একজন জানান, উপজেলার নওপাড়া ইউপির নওপাড়া বাজারে উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও ডিলার তরিকুল ইসলাম তারেক তার বিষাক্ত কীটনাশক ও গো খাদ্য বিক্রির দোকানে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল মজুদ করেছেন এবং তা বিতরন করা হবে। পরে কীটনাশক ও গো খাদ্যর দোকানে খাদ্য পণ্য মজুদের বিষয়ে সেল ফোনে ডিলার তরিকুল জানান, আলাদা করে রাখা হয়েছে। একপাশে কীটনাশক আরেকপাশে চাল রাখা হয়েছে। কীটনাশকের সাথে চাল রাখা নিয়ম বহির্ভূত প্রশ্নের উত্তরে বলেন এটা হলে হতে পারে তা-তো আমার জানা নাই। এরআগেও বিতরন করেছেন কি-না এর উত্তরে বলেন সব সময় তো করেছি। যেহেতু কীটনাশকের সাথে রাখা অসামঞ্জস্য হলে তা তিনি সামনের মাস থেকে অন্যত্র করবেন বলে জানান।
এদিকে উপজেলার রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নের ওএমএস খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ১০ কেজি চাল বিক্রির জন্য দুজন ডিলারের একজন ডিলার হচ্ছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। তার বিরুদ্ধে গত রবিবার কেরাদীঘি গ্রামের কার্ডধারী ২৮৭নং মেহেরা খাতুন, ২৭৭নং রফিকুল ইসলাম, হরিপুর গ্রামের ৩০৩নং রবিউল্লাহ, পুরানবাড়ি গ্রামের ২৮৩নং এনামুল হক সহ ৫ জনের অধিক সংখ্যক ভূক্তভোগী অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউএনও বরাবরে। তারা বিগত কয়েক মাস চাল উত্তোলন করেননি কিন্তু মাষ্টারোলে দেখানো হয়েছে। এদিকে একই ইউনিয়নের চাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের নামে ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল উত্তোলন করা হচ্ছে কয়েক মাস ধরে। ৫৩৫ নং কার্ডধারী ভূক্তভোগী মৃত আব্দুল হামিদের স্ত্রী শাফিয়া আক্তার জানান, তার স্বামী মারা গেছে প্রায় ৯ মাস আগে এরপর তারা কোন দিনই খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজির চাল কিনতে আসেননি।
এ বিষয়ে ডিলার হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মৃতের মেয়ে রেহানা আক্তারকে চাল দিয়েছি। মেয়ের স্বামী হারিস মিয়াও সাথে ছিল। এর ভিডিও রয়েছে। মৃত ব্যক্তির চাল আরকজনকে দিতে পারেন কি-না এ প্রশ্নের আলোকে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রতিনিধি চেয়ারম্যান ৫জনের জন্য সুপারিশ করেছেন। সে আলোকে অসহায় মেয়ের মানবিক দিক বিবেচনা করে দিয়েছি। ডিলারশীপ বাতিলের জন্য আমার বিরুদ্ধে যেভাবে যড়ষন্ত্র হচ্ছে তাতে ডিলারশীপ ছেড়ে দিবেন বলে তিনি জানান।
পরে ওই ইউপির চেয়ারম্যান এসএম ইকবাল রুমীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সুপারিশ আমি করতে পারি। দেওয়া না দেওয়ার এখতিয়ার ডিলারের।
এ বিষয় কেন্দুয়া উপজেলার ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম ডিলার হাবিবুর রহমানের অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়ে, সম্ভবত অফিসে রিসিভ হয়েছে। এগুলোর আগে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ব্যস্ততায় এখনো তা দেখা হয়নি।
এছাড়া কেন্দুয়ায় কয়েকদিন আগেও ওএমএসর ৯০ বস্তা জব্দকৃত চালের ঘটনায় রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নের আরেক ডিলার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আমিনুর রহমান শাকিল কারাগারে রয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে রোয়াইলবাড়ি বাজারের সাইফুল মিয়ার ভাঙ্গারির দোকানঘর থেকে ৯০ বস্ত চাল জব্দসহ সাইফুলকে আটক করে কেন্দুয়া থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ডিলার শাকিলের চাল বলে জানায়। পরে পুলিশ ওই দিন রাতেই শাকিলকে আটক করে। পরে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় কারাগারে রয়েছে বলে জানান কেন্দুয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।