পরশ মির্জাঃ ভাষা শহীদ পৃথিবীর অন্য কোন জাতি বা ভাষাভাষীদের নেই। অাছে শুধু বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষাভাষীদের। ১৯৫২’তে ভাষা শহীদগণ জীবন দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করেছেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক তৎকালীন সময়ে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা প্রতিহত করেছেন অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে। পিচঢালা রাজপথে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে। রচনা করেছেন যুগান্তকারী কালজয়ী রক্তস্নাত ইতিহাস। সেই কালজয়ী ইতিহাসের সাক্ষী শহীদ মিনার। যে শহীদ মিনার আমাদেরকে শাণিত করে তার তেজদীপ্ত চেতনায়।
শহীদ মিনার অন্যান্য দালান কোঠার মত শুধু ইট সিমেন্ট কংক্রিটে তৈরি কোন দন্ড নয়। শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মারক বা সাক্ষী। এই শহীদ মিনার তথা ভাষা আন্দোলনের দীপ্ত চেতনার পথ ধরে পরবর্তীতে বাঙালী জাতি অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। পাকিস্তান আমলে হায়েনা পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ভীত হয়ে শহীদ মিনারকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। চালিয়েছে দমনপীড়ন। বহুবার গুড়িয়ে দিয়েছিল শহীদ মিনার। কিন্তুু চূড়ান্তভাবে পারেনি। এখনও সম্ভব নয়। কোন কালেই কেউ তা পারবে না। কারন ইতিহাসের স্বাক্ষীকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনা।
মাঝেমধ্যে পাকিস্তানীদের ন্যায় কেউ কেউ ধর্মের আবরনে শহীদ মিনারকে আঘাত করার অপচেষ্টা করে। অপব্যাখ্যা করার অপপ্রয়াস চালায়। বিশেষ করে শহীদ দিবস আসন্ন হলেই এ অপ্রপ্রয়াস চালানোর মাত্রাটা বেড়ে যায়। এটা অজ্ঞ মানসিকতার বহি:প্রকাশ বৈ কিছু নয়।
শহীদ মিনারকে তো কেউ পুঁজো আরাধনা দিতে যায় না বা ইবাদত করতে যায় না। যায় ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে শুধু বাঙালী পরিচয়ে সম্মিলিতভাবে পূর্ব প্রজন্মের বীরশার্দুল শহীদদের স্মরণ করতে। মহান ইতিহাসকে স্মরণ করতে। তাই কেন সার্বজনীন ইতিহাসকে আঘাত করার হীনচেষ্টা করা হয়? এ হীনচেষ্টা তো প্রজন্মকে ইতিহাসবিমূখ করার অপপ্রয়াস।
শহীদদের স্মরণ করতে হয়। স্মরণ করতে হয় তাঁদের জীবনের বিনিময়ে এনে দেয়া গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে গিয়ে।
ভাষা আন্দোলন বাঙালী জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সোপান। এখান থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে বাঙালী ধাবিত হয় স্বাধীনতার পানে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করে মহান স্বাধীনতা। শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যাওয়াই উচিত। যদি শহীদ দিবসেও শহীদ মিনারে গিয়ে স্মমর করা না হয় তাহলে তো ইতিহাস বেমালুম ভুলে যাওয়ার নামান্তর। তাই যেতে হবে শহীদ মিনারে ইতিহাসের টানে শহীদদের স্মরণ করতে। ভাষা শহীদদের স্মরণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদেরকে ছুটতে হবে শহীদ মিনারের পানে। দীপ্ত শপথে শানিত করতে হবে নিজেকে। বেঁচে থাকবে মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
মহান ভাষা আন্দোলনের স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার যুগযুগ ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। জানান দিবে বিশ্বকে তার লড়াকু ইতিহাস। বলবে, বঙ্গীয় ব-দ্বীপে বীরসেনানী বাঙ্গালী ১৯৫২’তে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করে রক্ষা করেছিল মাতৃভাষা বাংলাকে। যা দেখে অনুপ্রাণিত হবে আগামীর বিশ্ব। রক্ষা করবে নিজ নিজ মাতৃভাষাকে ভাষাখেকো হায়েনাদের কবল থেকে। প্রতিরোধ প্রতিহত করবে ভাষাখেকো হায়েনাদের কালোথাবা।