স্টাফ রিপোর্টার : আল মামুন রনি। সে কটন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ অফিসার। কটন গ্রুপে তার চাকুরীর বয়স প্রায় ১৭ বছর। ২০২০ সালের ৩১ মে তাকে কারখানা থেকে তার পাওনাদি না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ বের করে দেয়। অথচ আজ ৮ জুলাই ময়মনসিংহ কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর এর মাসকান্দা অফিসে কটন গ্রুপের শ্রমিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের অভিযোগ শুণানিতে তার ফাইলপত্রে উল্লেখ করা হয় তিনি নিজে রিজাইন দিয়ে তার সমুদয় প্রাপ্যাদি বুঝে নিয়েছেন। অভিযোগকারীর সকল শ্রমিকের ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একইরকম প্রমাণাদি পাওয়া যায়। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ এর অনুপস্থিতিতে এ বৈঠক পরিচালনা করেন শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) আব্দুল্লাহ আল মামুন, শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) মোখলেছুর রহমান এবং নন্দন চক্রবর্তী। এসময় উপস্থিত ছিলেন কটন গ্রুপের প্রতিনিধি ম্যানেজার হুমায়ুন, মিজান, এড জহিরুল ইসলাম পলাশ, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ এবং আঞ্চলিক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি মোবারক হোসেন এবং বিল্লাল হোসেনসহ অভিযোগকারী শ্রমিকগণ।
কটন গ্রুপের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ মজুরি প্রদান না করা, জোর পূর্বক চাকুরীচ্যুতি করাসহ শ্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কলকারখানা অধিদপ্তরে গত ৭ জুন প্রায় আট শতাধিক শ্রমিক এ মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ শুণানীতে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে বিরক্ত প্রকাশ করেন উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ। তিনি তার অফিসকক্ষে থাকা স্বত্বেও অভিযোগ শুণানীর কক্ষে উপস্থিত হননি। উপরন্তু সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সিনিয়র সাংবাদিকের মাধ্যমে ফোন করান।
শুণানীতে শ্রমিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের কাছে থাকা শ্রমিকদের ফাইলে রিজাইন বা পদত্যাগপত্র উল্লেখ করায় এবং শ্রমিকদের প্রাপ্য পাওনাদি বুঝিয়ে দেয়ার ভুতুড়ে কাগজপত্রাদি উপস্থাপন করায় শুণানীতে অংশগ্রহণকারী পক্ষসমূহ নিষ্পত্তিতে পৌঁছতে পারেন নি।
এ ব্যাপারে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ এবং আঞ্চলিক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে চাকুরীরত অভিযোগকারী শ্রমিকদের ফাইলে ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক ভুয়া পদত্যাগপত্র দাখিল করায় শুনানিতে নিষ্পত্তি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ শুণানীতে ডিআইজির অনুপস্থিতি শ্রমিকদের উপর কোন প্রভাব ফেলেছে কি না এ ব্যাপারে শ্রমিকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, ডিআইজির অনুপস্থিতি রহস্যজনক। তিনি যদি উপস্থিত হতেন অনেকাংশে আমাদের পাওনাদি আমরা পেতাম কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে এটা হয়নি।
উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ এর রহস্যজনক কারনে শুণানীতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি শ্রমিকদের মধ্যে বিভিন্ন কানাঘুষা তৈরী করে। কোম্পানি কর্তৃক আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টিও শ্রমিকদের সন্দেহের উদ্রেক করে।
এ ব্যাপারে ডিআইজির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেননি।
এ ব্যাপারে শ্রম পরিদর্শক ( সাধারণ) আব্দুল্লাহ আল মামুন কে শুণানিতে ডি আইজির অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, শুণানিতে তার উপস্থিতি বাধ্যবাধকতা নয়। শুণানী পরিচালনার জন্য তিনি আমাদের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ৭ জুন ২০২০ ইং তারিখে কল-কারখানা সমূহের শ্রমিক ছাঁটাই সংক্রান্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। যে প্রজ্ঞাপনে ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সার্বিক দিক বিবেচনায় শ্রমিক ছাঁটাই এবং কারখানা লে- অফ না করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অথচ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সাধারণ ছুটিতে থাকা প্রায় ৮ শতাধিক শ্রমিকদের মধ্য থেকে কটন গ্রুপ ফ্যাক্টরি ১০ জুন ২০২০ ইং তারিখে জোরপূর্বক প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে রিজাইন লেটারে সই আদায় করে। এসময় তাদের প্রাপ্য কোন প্রকার সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। উক্ত তারিখে কলকারখানা পরিদর্শক কারখানায় উপস্থিত হলে জোরপূর্বক রিজাইন আদায় বন্ধ করে এবং বাকি শ্রমিকদের ১৫ জুন ২০২০ ইং তারিখে মজুরি প্রদানের তারিখ নির্ধারণ করে। উক্ত তারিখে কলকারখানা ও শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকায় শ্রমিকদের কাছ থেকে রিজাইন না নিয়ে শুধু মে মাসের মূল মজুরির অর্ধেক মজুরি পরিশোধ করে তাদের চাকুরি নাই বলে জানিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন।
গত ২৮ শে জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে ৪০. ০১. ৬১০০. ০০০. ১৬.০০৭.১৯.৫৮ নং স্মারকে কটন গ্রুপের মালিক/ চেয়ারম্যান/ ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ মহাব্যবস্থাপনার প্রতি একটি চিঠি পাঠানো হয়। উক্ত চিঠিতে বলা হয়,আমতলী সিটি ষ্টোর ভালুকা ময়মনসিংহ ঠিকানায় অবস্থিত কটন গ্রুপের ৪টি কারখানা (স্পেসিফিক কটন লিঃ)কটন লাইন বিডি লিমিটেড, কটন এন্ড কটন লিমিটেড এবং কটন ডাইং এন্ড ফিনিশিং লিমিটেড এর শ্রমিকদের দায়েরকৃত অভিযোগসমূহ আইনানুগ ভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১২৪ ক এর বিধান মোতাবেক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত হয়ে অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তি করানোর জন্য এ নোটিশ প্রদান করা হয়।শ্রমিকগণের নাম ও কার্ড নং, চাকরীর পরিচয় পত্র নং এর তালিকা সহ কটন গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে শুণানিতে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।