বাবলী আকন্দঃ ছাত্রজীবন থেকেই বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা শুরু করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান। ছাত্রজীবন ছিল তাঁর বৈচিত্র্যময়। তিনি নিজেকে মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন যেভাবে কর্মজীবনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ছাত্রজীবনে থাকা অবস্থায় তিনি নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। টিআইবি থেকে শুরু করে ডিবেট, সাংবাদিকতা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নেতৃত্ব দেয়ার সকল গুণাবলী তার মধ্যে বিদ্যমান। যার চর্চা কর্মক্ষেত্রেও তিনি চালিয়ে গেছেন।
ময়মনসিংহ যুব নাগরিক সোসাইটির উদ্যোগে আজ ২৩ জুন ময়মনসিংহ জয়নুল উদ্যানের বৈশাখি মঞ্চে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান এর বিদায়ী অনুষ্ঠানে বক্তাগণ তা তুলে ধরেন। এসময় তাঁরা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্বই মানুষকে আদর্শিক করে তুলে যার প্রমাণ বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন সময়ে তিনি প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছাকাছি গিয়েছেন। যে কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ময়মনসিংহে একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছেন এবং একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে তা জানতে পেরেছেন এবং সম্পৃক্ত হয়েছেন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি নিষ্ঠার সাথে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। পাশাপাশি তাঁর বাইরে এসেও সাধারণ এবং অসহায় মানুষদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন।
দেশের এই করোনাকালীন দূর্যোগে শুধুমাত্র প্রশাসনিকভাবেই খাদ্য সহায়তা দেয়া থেকে শুরু করে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করেন নি। নিজস্বতার মধ্য দিয়েও মানবিকভাবে কাজ করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কেউ না খেয়ে থাকবে না। এ ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে মধ্যরাতে অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকেও অনুপ্রাণিত করেছেন নিজ স্বচ্ছ কাজের মাধ্যমে। যার ফলে তিনি সকলের ভালোবাসায় আজ সিক্ত। কিন্তু প্রচারের আলোয় আসেন নি তিনি।
গৃহহীন কেউ থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি স্বচ্ছতার সাথে নিজে উপস্থিত হয়ে বস্তিবাসী তথা আশ্রহীনদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন এবং এদের মধ্যে ৯৩ জনকে গৃহ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিএনএসবির মাধ্যমে ৫৪৩ জনকে চোখের ছানির অপারেশনসহ ১৩৩২ জনের চোখের রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। নিরাপদ খাদ্য উপজেলা ঘোষণা দিয়ে সে প্রত্যয়ে কাজ করেছেন। ১৩-১৪ বছর যাবত বন্ধ থাকা পরাণগঞ্জ হাসপাতালের আউটডোর সেবা চালু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ নীরবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলেছে যার সুফল ময়মনসিংহবাসী ৩ বছর পর পাবেন। এছাড়া ময়মনসিংহের প্রায় ৬ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বরং অসংখ্য মামলায় জর্জরিত ছিল ইউনিয়নগুলোর। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যার মধ্যে তিনি ২৯ টি মামলার মিমাংসা করেছেন। এছাড়া তিনি তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নীরবে অসংখ্য মানুষের উপকার করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, getting respect, earning respect। প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের লক্ষ্যকে অর্জন করতে তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তরুণদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ। নতুন এই ভবিষ্যৎদের এগিয়ে নিতে হলে তাঁদেরকে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে।
ময়মনসিংহে বিভিন্ন তারুণ্যদীপ্ত সংগঠনগুলোকে একত্রে এনে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করানো হয়েছে। এই তরুণদের মাঝে যেন গ্রুপিং তৈরী না হয় সেজন্য তিনি ময়মনসিংহের জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানান। তরুণদের ঝরে যেতে দেয়া যাবে না, তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
ময়মনসিংহ থেকে বিদায়কালে তিনি বলেন, আমি খুবই আপ্লুত যে আপনারা আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন, আমাকে নানাভাবে কাজ করায় সহযোগীতা করেছেন। ময়মনসিংহে আমি ঘাম ঝরিয়েছি তাই ময়মনসিংহকে আমি হৃদয়ে ধারণ করি। এই ময়মনসিংহ আর ময়মনসিংহবাসীকে আমার নিজের মনে করে নিয়েছি। ময়মনসিংহবাসীর আঘাত মানেই আমার আঘাত আর এর কোন উন্নয়ন মানেই আমার খুশি হওয়া।
তাঁর এ বিদায়ী অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র ইকরামুল হক টিটু উপস্থিত হতে না পারলেও তিনি মোবাইলে শুভ কামনা জানিয়েছেন। আর উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত জাহান মুকুল, ,দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল হাসান, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদুল হাসান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটারের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদাত হোসেন খান হিলু, জেলা আওয়ামীলীগ এর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম, জনউদ্যোগের আহবায়ক এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, এড শিব্বির আহমেদ লিটন, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি ইয়াজদানী কোরায়সী, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি স্বাধীন চৌধুরী, ময়মনসিংহ নিরাপদ সড়ক চাই এর সভাপতি আব্দুল কাদের চৌধুরী মুন্না, সময় টিভির হারুন অর রশিদ,করোনাযোদ্ধা আলী ইউসুফ, টিআইবি সনাক এর শফিক রহমান, অনসাম্বল থিয়েটার এর সভাপতি আবুল মনসুর, বিডি ক্লিনের বিভাগীয় সমন্বয়ক এড মতিউর রহমান ফয়সাল, এপেক্স ক্লাব ব্রহ্মপুত্রে সদস্য ফখরুল হাসান,
যুব নাগরিক সোসাইটির সভাপতি শুভ্র চক্রবর্তী, ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির আহবায়ক মমিনুর রহমান প্লাবন, সাংবাদিক বাবলী আকন্দ, আলভী আল আমিন, ময়মনসিংহ সাইক্লিষ্ট এর সদস্য মাখলুকার রহমান তন্ময়, করোনা যোদ্ধা শেখ ঈশান, যুব নাগরিক সোসাইটির সদস্য নাজমুল হোসেন সজীব, অবন্তীর মিনহাজ মিলন, স্টেজ ফর ইয়ুথ এর সদস্য সাফরান আহমেদ, রায়হান, রক্তদানে আমরা ময়মনসিংহ এর সদস্য শাহাদাত হোসেন, যুব নাগরিক সোসাইটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, রংধনুর রঙ এর আহবায়ক এম যে রুমেল প্রলয়, বিডি ক্লিন এর সদস্য সারোয়ার হোসেন, উৎসব শিং সাগর, স্কাউটার সিফাতসহ বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। সঞ্চালনায় ছিলেন বাচিকশিল্পী আসাদুজ্জামান রুবেল।