সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা): ‘স্যার আমি একজন সিএনজি চালক। নিজে কামাই করে খাই। কারো কাছে হাত পাতি না কিন্তু এখন কাজ কাম না থাকায় খুব কষ্টে আছি। আমার গাড়িটা থানার কাজে লাগিয়ে কিছু টাকা দেন। স্যার গত রাতে একজনের সেহেরি ৪জনে ভাগ করে খেয়েছি- মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল আহাদ খানের সেলফোন নম্বরে কল করে এ কথা বলেন এক সিএনজি চালক। গাড়ি চালিয়ে নিত্য রোজগারে বেশ স্বচ্ছল জীবন ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ফোন পাওয়ার পরপরই বাজার থেকে চাল, ডাল, তেলসহ সাত দিনের ইফতার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনে বিকেলে ওই সিএনজি চালকের বাসায় পৌছে দেন ওসি।
এ বিষয়ে ওসি আবদুল আহাদ খান জানান, জানু মিয়া নামের ওই ব্যক্তি সিএনজি চালিয়ে সংসার চালান । সন্তানসহ চার জনের পরিবারটি গাড়ি চালিয়ে রোজগার করে ভালই চলছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তিনি এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে তার রোজগার। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছেন। বিপদে মানুষ একে অন্যের পাশে দাড়াবে এটাই তো নিয়ম। এভাবে সারাজীবন মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই হৃদয়বান পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ছাড়াও এদিন দুপুরে দুপুরে করোনা প্রতিরোধে শারিরীক দূরত্ব নিশ্চিতে প্রচারণায় চালানোর সময় দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ ভিক্ষুকও এড়ায়নি ওসির মানবিক চোখ। সড়কে রোদ মাথায় নিয়ে বসে থাকা ওই ভিক্ষুককে দেখে থমকে যান তিনি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অসহায় ভিক্ষুককে তিনি বলেন- ‘কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার ভিক্ষার প্রয়োজন নেই। আপনাকে পুরো এক সপ্তাহের খাবার কিনে দেবো। আপনি এখন থেকে ঘরে থাকবেন’। ওসির এমন মানবিকতায় একবাক্যে ঘরে থাকার জন্য রাজি হলেন ওই ভিক্ষুক।
পরে বাজার থেকে তাৎক্ষণিক পুরো সপ্তাহের খাবার চাউল, ডাল, পিয়াজ, রসুন, তেল ও লবণসহ সংরক্ষণ যোগ্য অন্যান্য কিছু খাবার কিনে ভিক্ষুককে বাড়িতে পৌছে দেন তিনি। দৃষ্টিহীন ভিক্ষুক মো. বাচ্চু মিয়া বারহাট্টা সিংধা ইউনিয়নের নউল্লারচর গ্রামের বাসিন্দা।
আবদুল আহাদ খান ভাটিবাংলার রাজধানী খ্যাত নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ওসি হিসেবে যোগদানের অল্প সময়েই বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নখদর্পনে নিয়েছেন উপজেলার সামাজিক ও রাজনৈতিক চালচিত্র। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, পুলিশকে জনবান্ধব করা, তরুণদের দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করাসহ সর্বক্ষেত্রে তিনি প্রসংশিত হচ্ছেন।