নিজস্ব প্রতিবেদক: শুনানীর জন্য ধার্য দিনের সাত দিন আগেই অর্থাৎ শুনানীর নোটিশ প্রেরণের তারিখেই জমির নামজারি মঞ্জুর করার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোণা মদন উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. রেজোয়ান ইফতেকারের বিরুদ্ধে। এ কাজে সহায়তা করেন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রূপক চন্দ্র সরকার।
জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের আলী উসমান তালুকদারের মেয়ে মোসা. রুপা আলম ক্রয় সূত্রে এস.এ দাগ ১২৮৯ এবং বি.আর.এস ২১৬৩ নম্বর দাগে দুই শতাংশ জমির নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড ১০১৫/২০২৪-২৫ নম্বর নামজারি মামলাটি তদন্তে শুনানীর দিন গত ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেন। এরআগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানীতে অংশ গ্রহণের জন্য এ নামজারি মামলার বাদী মোসা. রুপা আলম ও বিবাদী মো. সোহরাব হোসনকে নোটিশ প্রেরণ করেন এসিল্যান্ড।
কিন্তু এই নামজারি মামলাটি যে তারিখে (১৭ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে সেই তারিখেই নামজারি মঞ্জুর করা হয়েছে। পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর ডিসিআর (২৪৭২৫৬০১০০১০১৫) বাবদ এক হাজার একশো টাকা অনলাইনে জমা প্রদান করা হয় রুপা আলমের নামজারি মঞ্জুরের বিপরীতে। কিভাবে শুনানী ছাড়া এবং ধার্য দিনের পূর্বেই তড়িগড়ি করে এমন ধরনের নামজারি মঞ্জুর করায় জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, দলিল সম্পদনের সময় বিআরএস রেকর্ডের প্রকৃত মালিক বিশ্বেশ্বর বৈশ্যের ছেলে বিধু ভুষন বৈশ্য। ২১৬৩ নম্বর বি.আর.এস দাগের জমি রেকর্ডের মালিক দলিল না দিয়ে তার পিতা বিশ্বেশ্বর বৈশ্য কর্তৃক দলিল সম্পাদিত হয়। বিধু ভুষন বৈশ্য কর্তৃক দলিল সম্পাদিত না হওয়ায় রেকর্ড থেকে গ্রহিতা মো. আব্দুল হক গংদের নামে দলিল সম্পাদন সঠিক হয়নি এবং জমির মালিকানার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। যা প্রকৃত পক্ষে জমি গ্রহিতার সাথে বড় ধরণের জালিয়াতি।
এক্ষেত্রে বি.আর.এস ২১৬৩ নম্বর দাগের ভূমির নামজারি মঞ্জুর প্রশ্নবিদ্ধ এবং খুবই সূক্ষ্মভাবে জালিয়াতি পূর্বক ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে প্রস্তাব দাখিল করে নামজারিটি মঞ্জুর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে এবং নাগরিক কর্ণার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আরও জানা যায়, এরআগে এসিল্যান্ড মো. রেজোয়ান ইফতেকার মদনে যোগদানের চার-পাঁচ দিন পর গত ২৫ আগস্ট রুপা আলম ২১৬৩ নম্বর দাগের জমি নামজারির জন্য আবেদন করেন। তার (রুপা আলম) আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই পূর্বক জাহাঙ্গীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তা রূপক চন্দ্র সরকার আবেদনটি প্রস্তাবনার সময়ে না মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে গত ১০ সেপ্টেম্বর রুপা আলম পুনরায় আবেদন করেন। উক্ত আবেদনটি যাচাই বাছাই শেষে একই ব্যক্তি (রূপক চন্দ্র সরকার) রুপা আলমের প্রস্তাবটি সুপারিশসহ অনুমোদনের জন্য এসিল্যান্ড বরাবরে প্রেরণ করেন। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
ছদ্ম নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে রুপা আলমের মোবাইলে ফোন দেন প্রতিবেদক। এ সময় প্রতিবেক রুপা আলমকে জানান, নামজারি নিয়ে আপনার মতো একই সমস্যা আমার (প্রতিবেদক)। কার মাধ্যমে নামজারি মঞ্জুর করেছেন সেই সোর্সের নামটা দিলে সে মোতাবেক অগ্রসর হওয়া যেতো প্রতিবেদকের এরকম প্রশ্নে রুপা আলম বলেন, ‘আমি তো লোকটার নাম জানি না। অফিসে গেলে হয়তো জানা যাবে।’ পরে প্রতিবেদক রুপা আলমকে জিজ্ঞেস করেন, নামজারি করতে কি পরিমাণ খরচ হয়েছে। জবাবে রুপা আলম বলেন ‘এগুলো তো মোবাইলে বলা যায় না, বুঝতেছেন-না। আমি এখন স্কুলে বুঝেছেন। বাসায় গিয়ে পরে কথা বলবো।’ পরবর্তীতে দুপুরের পরে রুপা আলমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ভাই, রং নাম্বার বলে সংযোগ কেটে দেন।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তা রূপক চন্দ্র সরকার বলেন, সাবেক এসিল্যান্ড মহোদয় যিনি ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন বি.আর.এস রেকর্ড থেকে প্রস্তাবনা দিতে হবে। রূপা আলমের প্রস্তাব যখন দিয়েছিলাম আগের স্যার মনে হয় বাতিল করেছিলেন। সর্বশেষ নামজারি থেকে প্রস্তাবনা দেওয়ার পরিপত্র রয়েছে। সেই পরিপত্রের আলোকের নামজারির জন্য রুপা আলমের প্রস্তাবনা দিয়েছি।
মদনের এসিল্যান্ড মো. রেজোয়ান ইফতেকার বলেন, আমি যাচাই বাছাই করেছি। আমাদের এটা করার রাইটস্ আছে। আইনের ভেতরেই করেছি।