চন্দন চক্রবতীঃ
নেত্রকোনা-৫, পূর্বধলা উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের সর্বত্রই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্তপল্লীর হাট বাজারের চায়ের দোকানেও সংসদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়ে জমজমাট আলোচনা শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, কে পাচ্ছেন ধানের শীষ এনিয়ে আলোচনার কোথাও কোন কমতি নেই। উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়কে শোভা পাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুনসহ অসংখ্য বিলবোর্ড। আগাম প্রচার-প্রচারনার মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের তিনজন, বিএনপির দুইজন এবং জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার গুরুত্বপূর্ন ৫ আসনে আ’লীগ এবং বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা হলেন পূর্বধলা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতিক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের টানা ৫ বারের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন, পূর্বধলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি টানা দুইবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বাবুল আলম তালুকদার। এ আসনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতিক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুজনের সমর্থনে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা বিভক্ত। জাতীয় শোক দিবস, প্রতিষ্ঠাবার্সিকীসহ রাজনৈতিক কর্মসূচীগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় পৃথক ভাবে পালিত হয়ে আসছে।
এ আসনে বিগত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতিক এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের নজির স্থাপন করেছেন। বিগত ১৩ বছরে পূর্বধলায় অসংখ্য পাঁকা রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মানসহ শিক্ষার প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছেন। চতুর্থবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড করার লক্ষে আলহাজ¦ মো. ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতিক এমপি এলাকায় দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।
এই আসনে বিগত তিনটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বতর্মান এমপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন। বিগত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত অব্যাহত রেখেছেন। ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু করে সদ্য অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচন, ও নেত্রকোনার কয়েকটি উপজেলায় আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করতে হবে। সেই লক্ষে দলের নেতা এবং কর্মীদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেনের অনুসারীরা উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কে আহমেদ হোসেনকে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে চাই উল্লেখ করে তোড়ন নির্মাণ করেছেন।
আ’লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যার্শী জাহিদুল ইসলাম সুজন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। তিনি টানা দুইবার উপজেলাবাসীর বিপুল ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে জাহিদুল ইসলাম সুজন আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলে স্থানীয় আ’লীগের একটি অংশ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিশাল ভোটে জয়লাভ করার পর থেকেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজনকে নিয়ে তার কর্মী সমর্থকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্ততি নেয়া শুরু করেন। নেত্রকোনা-৫ আসনটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা একই থাকায় দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজনকে নিয়ে তার কর্মী সমর্থকরা মাঠে রয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সফল সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুবলীগের একজন সফল সভাপতি। উপজেলা পরিষদের পাশাপাশি সুজন প্রায়শই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে ব্যাপকভাবে সুনাম অর্জন করেছেন।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শীদের মধ্যে দুইজন সাবেক ছাত্রনেতা ব্যাপকভাবে আলোচনায় রয়েছেন। বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার আ’লীগ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন।
এ আসনটিতে বিএনপির অপর হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্রদলের প্যানেলের সাবেক ভিপি প্রার্থী বাবুল আলম তালুকদার। তিনি বিগত সম্মেলনে বিপুল ভোটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বাবুল আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং নেতৃত্বে সকল বাধা ও বিপত্তি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা প্রতিটি দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করছেন। উপজেলায় বিএনপির নেতৃত্বের কারনে বাবুল আলম তালুকদার একাধিকবার হামলা এবং গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরন করেছেন। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বাবুল আলম তালুকদার স্থানীয় রাজনীতিতে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন সৈনিকের ভুমিকা রেখে চলেছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে নির্যাতিত এবং ত্যাগী নেতা হিসেবে বাবুল আলম তালুকদারের বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে।এ আসনে জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যার্শী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
নেত্রকোনা-৫ আসনে সংসদ নির্বাচনে আগাম প্রচারণায় প্রতিযোগিরা
Date:
Share post: