পূর্বময় ডেস্কঃ
আমাদের উনিশ শতকের ইতিহাসে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার নজির সৃষ্টিকারী পুরুষ পাগল নেতা টিপু শাহ পাগলপন্থী ফকির ইংরেজদের কারাগারে জীবনের শেষ ২৫বছর ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আমাদের জাতীয় সম্মানের অধিকারী হয়েছেন। তার পিতা পাগলপন্থী ধারার প্রবর্তক করম শাহ, বড় ভাই আধুনিক রুচিসম্মত শিক্ষানুরাগী ব্যর্থ রাষ্ট নায়ক ছফ্যাতি শাহ। তারা শুধু পীর দরবেশ নন, গণনায়কও ছিলেন। লেটিরকান্দা পাগলবাড়িতে করম শাহ, টিপু শাহ ও ছপাতি শাহ পাগলপন্থী ফকিরের মাজার বিদ্যমান।
প্রতি বছর মাঘ মাসে সপ্তাহব্যাপী তাদের পবিত্র মাজারে ওরশ উপলক্ষে সকল আশেকান ও মুরিদানগণ জমায়েত হয় এবং মিলাদ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরে অংশ গ্রহণ করে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করে থাকেন। আমরা দোয়া মাহফিলে শরিক হয়ে তাদের অতীত ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে পারি। কিন্তু বর্তমান গদিনিশিন যারা আছেন তাদের কিছু এলোমেলো কাজের জন্য, এলাকার গণ্যমান্যদের কিছু ব্যর্থতার ফলস্রুতিতে, প্রশাসনের কাছে তথ্য যায়, যে এখানে জুয়া, মাদক সেবন এবং অশালীন কার্যকলাপের ঘটনা ঘটে।
২৯২তম ওরশ মোবারক এর অনুমতি নিয়ে সৃষ্টি হয় ধুম্রজালের। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে চালাতে হবে ওরস শরিফ। আবেদন করেন গদিনিশিন যারা। যখন কোন ভাবেই অনুমতি পাওয়া যাচ্ছিল না, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে স্থানীয় এমপি পর্যন্ত গড়ায় অনুমতির বিষয়টা। যখন কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি, ঠিক তখন এসপি মহোদয় যোগাযোগ করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে, যেহেতু তিনি ইউনিয়নের আইন-শৃঙ্খলার কমিটির সভাপতি। গত করানোর সময় বন্ধ হয়নি ওরস মোবারক, স্বল্প পরিসরে হলেও চলেছে ওরশ শরিফ। ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মাজহারুল ইসলাম রানা দায়িত্ব নিলেন। গদি নিশীন যারা আছেন তাদের, ভক্তবৃন্দদের, স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে দুই-তিন দিন আলোচনার পর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করে একটা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।
সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে থাকবেন তিনি প্রধান উপদেষ্টা, যিনি পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ হিসেবে থাকবেন তিনি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতর থেকে একজন প্রতিনিধিত্ব করবেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে। যিনি ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি সভাপতি হিসেবে থাকবেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য নির্বাচিত হবেন তিনি সাধারণ সম্পাদক এবং পাগল বাড়ির গদি নিশিনদের মধ্যে একজনকে অর্থ সম্পাদক/ কোষাধক্ষ্য নিযুক্ত করা হবে। পদাধিকার বলে তারাই এই সকল দায়িত্ব পালন করবেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটা মসজিদ আছে, এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয় না। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাজার উন্নয়নের তেমন কোন কাজকর্ম নেই শুধু তাদের একঘেঁয়েমির কারণে। সাত দিনব্যাপী ওরশ শরীফে প্রায় লক্ষাধিক লোকে সমাগম হয় কিন্তু নেই কোন পানির ব্যবস্থা, নেই কোন ওযু এস্তেনজার ব্যবস্থা। একটা ঐতিহাসিক বাড়ি এই লেটিরকান্দা পাগল বাড়ি।
ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম মাজহারুল ইসলাম রানা পদাধিকার বলে নিযুক্ত হন সভাপতি হিসেবে। সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই সকলকে নিয়ে রেজুলেশন এর মাধ্যমে মিটিং করে গড়ে তুললেন ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। সম্পৃক্ত করলেন সকলকেই। রক্ষা করলেন রেকর্ড ভঙ্গ হতে যাওয়া ২৯২ বছরের ইতিহাস। সভাপতি নিযুক্ত হয়ে তিনি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।