কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : নেত্রকোনার মদনে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) ও রক্ষণাবেক্ষন (টিআর) প্রকল্পের আওতায় চারটি কাজের কোনটিরই মাটি না কেটে বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে মাঘান ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মাসুদের উপর। প্রকল্প বস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল কাজগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও চারটি কাজের বিপরীতে বিল পেতেও সহযোগীতা করেন তিনি। এলাকাবাসী জানায় প্রকল্প প্রণয়নের পরে তা বাস্তবায়ন ও বিল উত্তোলন সময় পর্যন্ত হাওর ঘেরা এই ইউপির রাস্তা ও কাজের স্থানের আশপাশ এলাকা আগাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
জানা যায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে ছালাহানীকান্দা হতে লাহুত মিয়ার জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ২য় পর্যায়ে নয়াপাড়া কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ। একই অর্থবছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায়ে ঘাটুয়া গ্রামের আইনুল চৌধুরী ইরিগেশন ড্রেইন সংস্কারে জন্য ৫০ হাজার ও কাতলা কাসেমের বাড়ি হতে জয়বাংলা বাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে কাজগুলোর বিপরীতে ছটাক পরিমাণ মাটিও কাটা হয়নি। পক্ষান্তরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুন সমাপনীতে প্রত্যেকটি কাজের বিপরীতে বিল উত্তোলন করে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
আরও জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী মদন উপজেলায় ইউপি পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ পহেলা মার্চে শপথের পরে দায়িত্বভার নেন। প্রকল্প প্রণয়নের কাজটি জানুয়ারীতে হাতে নেওয়ার কথা থাকলেও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের দায়িত্বভারের জন্য প্রকল্পগুলো বিলম্বে হাতে নেওয়া হয়।
মাঘান ইউপি আ.লীগের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা কৃষি ও সমবায় সমিতির সম্পদক মন্ডলীর সদস্য আবুল কাসেম আজাদ, ঘটুয়া গ্রামের আনোয়ার পারভেজ চৌধুরী জানান, কাবিখা-কাবিটা কোন প্রকল্পের আওতায় গেল অর্থবছরে মাটিই কাটা হয়নি এই ইউপিতে। তাছাড়া এপ্রিল-অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হাওর বেষ্টিত এলাকার গ্রামীন রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে থাকে। গেল বৈশাখে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখানকার নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগাম বন্যা দেখা হয়। কবরস্থানসহ প্রকল্পের রাস্তাগুলোর ছটাক পরিমাণ মাটিই কাটা হয়নি। প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর প্রকল্পের রাস্তা ও স্থানগুলোর আশপাশের স্থান পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পানির মধ্যে মাটি কাটবে কীভাবে ও মাটিই পাবে কোথা থেকে। কাজ না করেই গেল অর্থবছর শেষে কাজের বিপরীতে বিল উত্তোলন করেছে চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প তদারকির কর্তাব্যক্তিরা।
নয়াপাড়া রানীহালা গ্রামের সালেক মিয়া (মালেক) বলেন, মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে কয়েকদিন আগে কবরস্থানে মাটি কাটানো কথা চেয়ারম্যানকে বললে তিনি বলেন ৯০ হাজার টাকা আছে। ভেকু আসলে মাটি কাটানো হবে। কবরস্থানের জন্য নতুন করে আরও তিন লাখ টাকা বরাদ্দের কথা শোনতে পারছেন তিনি।
মাঘান ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মাসুদ জানান, যে প্রকল্পগুলোর কথা বললেন সেগুলোর নামও জানি না। প্রকল্পগুলো আগের চেয়ারম্যানের আমলে অথবা দলীয় লোকদের হতে পারে। এ ব্যাপারে কথা বলার থাকলে পিওআই সাহেবের সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল মুঠেফোনে জানান, কাজ ছাড়া কোন কাজরই বিল টাকা দেওয়া হয় নাই। অফিসে এসে দেখা করেন।
মদনের ইউএনও তানজিনা শাহরীনকে প্রকল্পগুলো বিষয়ে অবগত করলে তিনি বলেন, নতুন এসেছি। যে প্রকল্পগুলোর কথা জানালেন সেগুলোর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।