বাবলী আকন্দঃ
অমরাবতী নাট্য মন্দির। যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে। মূলত নাটকের জন্য অমরাবতী নাট্য মন্দির সৃষ্টি হয়েছিল। তারা চিন্তা করেছিল সাংস্কৃতিক উৎকর্ষের জন্য এটি ব্যবহৃত হবে। যার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন তৎকালীন জমিদারগণ। জমিদারি শাসনামল বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে ১৯৬৭ সালে এর নামকরণ করা হয় লক্ষী নারায়ণ পিকচার প্যালেস।
পরবর্তীতে অমরাবতী নাট্য মন্দিরের একটি প্রকল্প হিসেবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ‘ছায়াবাণী ‘সিনেমা হল নামে চালু করা হয়। এখানে ভাড়ায় সিনেমা পরিবেশিত হতো। ২০০২ সালে ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা হামলার পর থেকে এবং সময়ের ব্যবধানে সিনেমা ব্যবসায় ধ্বস নামায় এটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। সিনেমা হল এবং এর আশেপাশের জায়গাটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল।যেখানে মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিত। অমরাবতী নাট্য সমাজের উদ্যোগে ঠিক সে জায়গায় মাটি ভরাট করে পরিপাটি করে গতকাল
স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অমরাবতী নাট্য সমাজ তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার চর্চা স্থানীয় ও জাতীয় ভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা জোর দিচ্ছেন। বিভিন্ন সেক্টরে তাঁরই নেতৃত্বে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
অমরাবতী নাট্য সমাজের সভাপতি সিনিয়র আআইনজীবী এ এইচ এম খালেকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর হবিগঞ্জের বিচারক সুদীপ্ত দাস, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির সভাপতি এহতেশামুল আলম, ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজুল আলম ও মুসলিম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অমরাবতী নাট্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক এড আতাউর রহমান মুকুল। উপস্থিত ছিলেন অমরাবতী নাট্য সমাজের সহ সভাপতি ডাঃ কে আর ইসলাম, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এড আব্দুর রাজ্জাক সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আলোচনা শেষে বহুরূপী সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিদ্রোহী নাট্যগোষ্ঠী এবং লোকজ নাট্যদল তাদের আকর্ষণীয় পরিবেশনা পরিবেশন করে। উল্লেখ্য, ১৯২৪ সালে তৎকালীন ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. জে আর ব্লেয়ারকে সভাপতি ও রায় বাহাদুর শশধর ঘোষকে সম্পাদক করে নাট্যমন্দির নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়। দু’তলা আধুনিক মঞ্চসহ নাট্যমন্দিরের নির্মাণকাজ শেষে নামকরণ করা হয় অমরাবতী নাট্যমন্দির। ‘মাধবরাও’ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে এর উদ্বোধন হয় ১৯২৬ সালে। নাট্যমন্দির প্রতিষ্ঠার পর জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীকে সভাপতি ও আইনজীবী জমিদার সুরেন্দ্র নাথ সেনগুপ্তকে সম্পাদক করে অমরাবতী নাট্যসমাজের গঠনতন্ত্র রচিত হয়। প্রথমদিকে পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চস্থ হলেও পরে রোমান্টিক ও সামাজিকসহ বিভিন্ন নাটক মঞ্চায়ন করে অমরাবতী নাট্যসমাজের কর্মীরা। একটা সময় প্রয়াত এড নীরেন ঘোষ, এড সুলতান উদ্দিন খান, এড শফিক উদ্দিন খান গুনীজনদের আড্ডা জমতো। আবারো এ স্থানটিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাংস্কৃতিক চর্চায় তা মূখরিত হয়ে উঠবে বলে সকলের প্রত্যাশা।
অমরাবতী নাট্য সমাজের আয়োজনে সাংস্কৃতিক চর্চায় অমরাবতী আবারো অবদান রাখবে।
Date:
Share post: