পূর্বধলা প্রতিনিধি : নেত্রকোণার পূর্বধলায় সদ্য সমাপ্ত হোগলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফলে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। কারচুপির অভিযোগ এনে পুনরায় ভোট গণনা ও গেজেট স্থগিত চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেছেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন। রায়ে বিবাদীদেরকে ফের ভোট গণনা করতে ও গেজেট স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারক মামনুন রহমান ও খন্দকার দিলিরুজ্জামানের যৌথ বেঞ্চ এ রায় দেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আইনজীবীর সার্টিফাই কপি হাতে পেয়েছেন আবেদনকারী।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সাইদুল ইসলাম। তিনি নৌকা প্রতীকে এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র ৪৯ ভোটের ব্যবধানে তাকে হারিয়ে দিয়ে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খোকনকে জয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ করেছেন মোঃ সাইদুল ইসলাম।
রিটে বিবাদীরা হলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবীর খন্দকার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ, পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম, হোগলা ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, হোগলা ইউনিয়নের জামিয়া কাওমিয়া দারুল উলুম সেহলা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম খান পাঠান, পানিশা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও চলিত ডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এসএম শহিদুল্লাহ এবং বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খোকন।
অভিযোগকারী মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ নভেম্বর হোগলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হোগলা ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করি। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে, মৃত ভোটর, প্রবাসী ভোটার, অনুপস্থিত ভোটার এর ভোট দেওয়া হয়েছে। ৫নং কেন্দ্র- পানিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট গ্রহনের তালিকায় গড়মিল রয়েছে। যেমন- মহিলা সংরক্ষিত সদস্যের ভোট সংখ্যা, চেয়ারম্যান ভোটের সংখ্যা এবং সাধারণ সদস্যের ভোটের সংখ্যা সম্পূর্ণ অমিল। ৫নং কেন্দ্র স্বতন্ত্রী প্রার্থী চশমা প্রতীকের নিজ কেন্দ্র বলে আমার নৌকার প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয় ও এই ইউনিয়নের সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা করে এবং চশমা প্রার্থীর ভোটের সাথে নৌকার ভোট মিলিয়ে বান্ডেল করে গণনা করে ফেলে। পরদিন সকালে পানিশা কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাড়াহুড়া করে চশমা প্রতীকে ভোট কারচুপি করার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। নৌকা প্রতীকের এজেন্টর এর কাছ থেকে দুপুর ০১ টার আগেই স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। কালিহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোন এজেন্টের সাক্ষ্যগ্রহণ করেননি ওই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার। নির্বাচনে ভোট গণনার সময় ব্যালট পেপার এজেন্টদের সামনে গণনা করার কথা থাকলেও তা না করে পানিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনার আগেই এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। ৩নং কেন্দ্র জামিয়া কাওমিয়া দারুর উলুম সেহলা মাদ্রসায় প্রথমে নৌকার ভোট ১১৮৩ গণনা করে ঘোষণা দিলেও রেজাল্ট সিটে ১০৮৩ ভোট দেখানো হয়। ৫নং পানিশা কেন্দ্রে নৌকার ভোট ৭৪৭ এবং চমশা প্রতীকে ১৩০০ গণনা করে ঘোষণা দিলেও রেজাল্ট সিটে নৌকার ৬৪৭ ভোট ও চশমা প্রতীকের ১৩৭৯ ভোট দেখানো হয়। চলিত ডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রেজলশীটে ভোটের গড়মিল পরিলক্ষিত হওয়ায় পরবর্তীতে আমি উপজেলা সভা কক্ষে ফলাফল সংগ্রহ ও ঘোষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ৫নং কেন্দ্র পানিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩নং কেন্দ্র জামিয়া কাওমিয়া দারুর উলুম সেহলা মাদরাসা’র এবং চলিত ডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ৩টির কেন্দ্রের ভোট গণনার জন্য রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে রির্টানিং অফিসার ভোট গণনা ছাড়াই স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা) সিরাজুল ইসলাম খোকন কে ৪৯ ভোটের ব্যবধানে হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করে। আমি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সত্বেও কৌশলে তারা আমাকে বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো ফলাফল লিখে প্রকৃত ফলাফল পাল্টে দিয়েছেন, যা ভোট গণনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপির সামিল। এই অনিয়ম ও কারচুপি আমি ও ইউনিয়নের সম্মানিত ভোটরগণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। সুষ্ট নির্বাচনী ব্যবস্থা কার্যক্রর ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার স্বার্থে পুননির্বাচনের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত আবেদন করেন এবং গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার জোর দাবি জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ বিষয়ে হোগলা ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, হোগলা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের (৩, ৫ ও ১০ নম্বর) ভোট কেন্দ্রের ভোট গণনার আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে রিট হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। এখনো অফিসিয়ালি কোন কাগজপত্র হাতে পাইনি।