বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। বিমর্ষ চেহারায় নারী পুলিশ হেডকোয়ার্টারের লনে বসা আসপিয়া ইসলামের চোখে-মুখে অন্ধকার। পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তার চাকরি হচ্ছে না এক খণ্ড স্থায়ী জমি না থাকায়।
আসপিয়ার বিমর্ষ এমন একটি ছবি বৃহস্পতিবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
বিষয়টি চোখে পড়লে প্রয়োজনীয় এক খণ্ড জমি উপহার নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. মেজবাহ উদ্দীন।
ওই গ্রামের মৃত কফিল উদ্দীন মেম্বারের ছেলে মেজবাহ। আসপিয়ার নামে নিজস্ব সম্পত্তি থেকে প্রয়োজনীয় জমি লিখে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে তার স্থায়ী ঠিকানা করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।
মেজবাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে আসপিয়াকে জমি দিয়ে তার চাকরি নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা চান।
জানা গেছে, নিজ যোগ্যতার বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের সাতটি ধাপ পেরিয়ে উত্তীর্ণ হলেও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় চাকরি পাচ্ছেন না বরিশাল জেলার সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ভূমিহীন আসপিয়া।
তিনি গত বছর এইচএসসি পাস করেন। বরিশাল জেলার খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে আসপিয়া।
ছোট থেকেই ওই গ্রামের এক ব্যক্তির দেওয়া আশ্রিত জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন আসপিয়াসহ তার পরিবার। ছোট ভাই পোশাক কারখানার শ্রমিক।
সে অল্প আয়েই চলে তাদের সংসার।
বরিশালে পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নিতে সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন আসপিয়া। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।
এরপর ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হন। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।
চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
পরে ভূমিহীন হওয়ার কারণে (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ী মো. মেজবাহ উদ্দীন বলেন, একটু জমির জন্য মেধাবী আসপিয়ার চাকরি হচ্ছে না- এমন একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ে। এমন একটি খবরে মন খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার পরও শুধু নিজস্ব স্থাবর একটু সম্পত্তি না থাকায় অসহায় মেধাবী মেয়েটির চাকরি হচ্ছে না দেখে তার নামে এক খণ্ড জমি লিখে দিতে চেয়েছি। এতে তার চাকরিটা নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, আমার একটি মেয়ে আছে। পরিবার নিয়ে থাকি। যতটুকু সম্পদ আছে তা থেকে আসপিয়াকে জমি দিয়ে সহযোগিতা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। তার এমন অসহায়ত্ব আমাকে ব্যথিত করেছে। তাই পরিবারে সঙ্গে কথা বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবারও সম্মতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সহায়তায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আসপিয়াকে এ সহযোগিতাটুকু নিশ্চিত করতে চাই।