শাপলা আক্তারঃ এ লড়াই জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
এই স্লোগান কে সামনে রেখে-
৬০-তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় ছাত্রদল ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোগে বিকাল ৪ ঘটিকায় জেলা কার্যালয় ১৩৪, জে.সি.গুহ রোড, পাটগুদাম র্যালীর মোড়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা আহবায়ক সুমাইয়া আক্তার শাপলা এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহবায়ক রবিন মিয়া।
অতিথি হিসেবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের নেতা রবিদাস ।
এছাড়াও ছাত্রনেতা লামিয়া আক্তার , সালমা আক্তার,আলো আক্তার,সাব্বির হোসেন বক্তব্য রাখেন।
নেতৃবৃন্দ তাদের আলোচনায় বলেন,৬২’র শিক্ষা আন্দোলন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস। যা এ দেশের ছাত্র গণ-আন্দোলনের একটি স্মরণীয় দিন। তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি প্রনয়ণ করা হয়েছিল। যে শিক্ষানীতির বেশ কিছু বক্তব্য তৎকালীন পাকিস্তানের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে প্রাসঙ্গিক ছিল না।এ শিক্ষানীতির প্রস্তাবনায় বলা হয়, “শিক্ষা সম্পর্কে জনসাধারণের চিরাচরিত ধারণা অবশ্যই বদলাতে হবে। সস্তায় শিক্ষা লাভ করা যায় বলিয়া তাহাদের যে ভুল ধারণা রয়েছে, তা শীঘ্রই ত্যাগ করিতে হবে। যেমন দাম তেমন জিনিস এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন শিক্ষার ব্যাপারেও তেমনি এড়ানো দুস্কর।” জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৯৫৯, বা, ১৯৫৯–এর শিক্ষা কমিশন হলো তৎকালীন পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সম্পর্কিত একটি নীতিমালা তৈরির জন্য গঠিত সরকারি কমিশন।
১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সূচিত আন্দোলন দমন করার জন্য গ্রেফতার, মামলা, হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি বেত্রাঘাতসহ বর্বরোচিতভাবে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
অপরদিকে খেটে খাওয়া মানুষের উপর চলছিলো শোষণ-নিপীড়ন ও দমন-পীড়ন।
১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও হরতাল কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য চরম নির্যাতনমূলক পথ গ্রহণ করেন শাসকগোষ্ঠী । ঐ দিন ঢাকাসহ দেশের সকল শহরের রাজপথে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল চলতে থাকে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ইত্যাদি সেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমন করতে পারেনি।
সাধারণ জনগণও ছাত্র সমাজের প্রতি আরও দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সারা দেশে তিন দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। জনগণের সমর্থিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে আইয়ুব খানের সামরিক সরকার তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন পূর্ববাংলার ছাত্র-আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র -জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের ছাত্র বিরোধী শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট স্থগিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষা আন্দোলনের সাফল্য অর্জিত হয় এবং সারা দেশ ব্যাপী এই দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
নেতৃবৃন্দ শিক্ষাদিবসের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তথা জাতীয় গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সঙগ্রাম অগ্রসর করার আহবান জানান।