মো. সাকের খান (মদন) : নেত্রকোনার মদন উপজেলায় দুই পক্ষ মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে ৫ মাস ধরে সংঘর্ষের ঘটনা মীমাংসা না হওয়ায় জনমতে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে নোয়াগাও,বাউসা,তালুককানাই আলমশ্রী, সোনাখালী লোকজনদের সাথে মাখনা গ্রামের লোকজনের কোনো যোগাযোগ নেই। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ৫ মাস ধরে জনতা বাজারে মাখনা গ্রামের কোনো লোকজন যাতায়াত না করায় মাখনা গ্রামের কয়েকটি দোকান এখন পর্যন্ত বন্ধ। কোন অনুষ্ঠান বা কেউ মারা গেলে এক পক্ষ অপর পক্ষের এলাকায় যাতায়াত করলেই গুনতে হবে জরিমানা এমনটাই সিদ্ধান্ত স্থানীয় মাতুব্বরদের।
জরিমানার ভয়ে অনেকেই আত্মীয়তার সর্ম্পক নষ্ট করছেন।এ নিয়ে দপায় দপায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শালিসি বৈঠক করেও এর কোনো মীমাংসার সিন্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ সোমবার(২৮ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে সালিশ বৈঠকের জন্য বসলে ও (নোয়াগাও, বাউসা, তালুককানাই, আলমশ্রী, সোনাখালী) এই পাঁচ গ্রামের নেতারা না আসায় অবশেষে মীমাংসায় ব্যর্থ হয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা যায়, নায়েকপুর ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের মানিক মিয়া জনতা বাজারের ৪ শতাংশ ভূমি একই ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের ফৌজদার মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। ফৌজদার মিয়া ক্রয়কৃত ভূমিতে দোকান ঘর নির্মাণ করায় ফৌজদার মিয়া ও শান্তু মিয়া দোকান ঘর নির্মাণ করেন। ফৌজদার ও শান্তু মিয়ার নব-নির্মিত ওই দোকান ঘর ভেঙে ফেলে জনতা বাজার কমিটি ও এলাকাবসী। এ ঘটনায় মাখনা গ্রামের ফৌজদার মিয়ার ছেলে সোহেল খান বাদী হয়ে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুল হকসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরই জেরে নোয়াগাও,বাউসা,তালুককানাই আলমশ্রী, সোনাখালী(৫ গ্রাম এক দল) হয়ে মাখনা গ্রামের সাথে ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিংহের বাজারের পাশে গৌরার হাওরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এ সময় কয়েক ঘন্টা সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই দিন পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষের পর জনতা বাজারের জমির মালিক বাউসা গ্রামের মানিক মিয়ার বসতঘর ভাংচুর করে এলাকাবাসী। এ নিয়ে কয়েক দপা ছোট বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ৫ জুন মাখনা গ্রামের লোকজনের সাথে (নোয়াগাও,বাউসা,তালুককানাই আলমশ্রী, সোনাখালী) ৫ গ্রাম এক হয়ে সংঘর্ষ হয়। এর পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ দপায় দপায় ৪টি বৈঠক করেন। সংঘর্ষের আহত রোগীর চিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ বাবদ এতে দুই পক্ষের ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৫ গ্রামের দাবি মাখনা গ্রামের ফৌজদার মিয়ার জনতার বাজারের দলিলকৃত ৪ শতাংশ ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে। এমন দাবি ধরলে মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি।
মাখনা গ্রামের মাতব্বর হাদিস মিয়া, করিম মিয়া, ফৌজদার মিয়া বলেন, শালিসী বৈঠকে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি আমরা তা মেনে নিয়েছি। আমাদের গ্রামের ফৌজদার মিয়ার ৪ শতাংশ জায়গা ও দোকানঘর জোড় পূর্বক দখলে নিতে চায়।
পাঁচ গ্রাম (নোয়াগাও,বাউসা,তালুককানাই,আলমশ্রী, সোনাখালী) পক্ষে মাতাব্বর তহুর মাস্টার জানান, প্রথম দপায় আলোচনায় জনতা বাজারের মাখনা গ্রামের ৪টি দোকানের ভিট আমাদের দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে মাখনা গ্রামের ভিট মালিক কে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এতে মাখনা গ্রাম না মানায় পুনরায় শালিসে সিদ্ধান্ত হয় জনতা বাজারে ভিট আমাদের দিয়ে সিংহের বাজারে ২ টি ভিট তারা নিবে। এর সাথে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা বাদদ দিবেন ৩ লাখ টাকা। কিন্তু এলাকার (নোয়াগাও, বাউসা, তালুককানাই, আলমশ্রী, সোনাখালী) লোকজন এ সিদ্ধান্ত না মানায় বিষয়টি সুরাহা হয়নি। তবে প্রশাসনকে আশস্থ করেছি নতুন করে কোনো সংঘর্ষ হবে না।
নায়েকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রোমান কালের এ প্রতিনিধি কে জানান দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও মাতুব্বরদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কয়েকদিন পর পর গ্রামের হাজারো লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, আলোচনায় সিন্ধান্ত হয়েছে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হবে না। তবে জায়গার জমির বিষয়টি তারা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহেমেদ বলেন, এ ব্যাপারে কয়েক দফা শালিসী বৈঠক হয়েছে। মীমংসার সিন্ধান্ত দুই পক্ষের মাতব্বরা মেনে নিয়েছিল। সোমবার (২৮ জুন) দু-পক্ষের লোককজন আসার কথায় থাকলেও এর মধ্যে এক পক্ষ না আসায় বিয়টি এভাবে থেকে যায়।