প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সোমবার পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুখ ফয়সল এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সারাদিন শেষে প্রায় মাঝরাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকেও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই নিন্দনীয় ঘটনাটি সাংবাদিকতা পেশার ওপর বিরাট হুমকি। অতি দ্রুত আমরা রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও এ ঘটনায় জড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে, রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ে আটকে রেখে তার ওপর যে নির্যাতন করা হয়, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দেশে স্বাধীন সংবাদিকতা নেই এবং মত ও তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ সকল মিডিয়াকর্মী নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করছে।
আর্টিকেল নাইনটিনের ফারুখ ফয়সল বলেন, “করোনা মহামারিকালীন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের কারণেই রোজিনা ইসলামকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়। তিনি অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা বা করতে বাধা দেয়া, ৫ ঘণ্টা পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা এবং সবশেষে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা, এ সবই পরিকল্পিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”
আর্টিকেল নাইনটিন বিশ্বাস করে, সরকারের কাছে যে তথ্য আছে, তা জনগণের। সেই তথ্য জানার অধিকার সাংবাদিকের আছে। তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হলো সত্য প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া। সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের কারণে হেনস্তা করার কোনো অধিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের নেই।
অনুসন্ধ্যানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর মত একজন সাংবাদিকের সাথে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এহেন আচরণ বুঝিয়ে দেয় দেশে মিডিয়া ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কতটুকু এবং সাংবাদিকরা কতটুকু নিরাপদ।
রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও মামলা করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফারুখ ফয়সল। তিনি বলেন, “সরকারের এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। একই সাথে পেশাগত স্বার্থে ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত হতে হবে। তিনি মনে করেন সাংবাদিক সংগঠনগুলো পেশাগত স্বার্থে যতদিন একত্রিত না হতে পারবে, ততদিন বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা অসম্ভব”।
পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৃণমূল পর্যায়ের সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান তিনি। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আজকের এই সময়ে তৃণমূল সাংবাদিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে আর্টিকেল নাইনটিন।
দিনের দিনের পর সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন সাংবাদিক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
আর্টিকেল নাইনটিন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কার্যক্রম শুরু করে।