সাইফুল আরিফ জুয়েল, (মোহনগঞ্জ) নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে থাকা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের খাবারের টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার মোট ৮টি ক্লাবের ২৪০ জন শিক্ষার্থীর মাসিক খাবারের বরাদ্ধ ৫৭ হাজার ছয়শত টাকা। কিন্তু অফিস কর্তৃপক্ষ ১৩ হাজার টাকার খাবার দিয়ে বাকি টাকা হাতিয়ে নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠনের মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষার্থীদের গান, কবিতা আবৃত্তি শেখানোর প্রকল্প শুরু করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরের বছর মার্চে করোনার কারণে বন্ধ থাকে এসব কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় শুরু হয় এ ক্লাবের কার্যক্রম।
পুরো উপজেলায় ৮টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে একজন করে মোট ৮জন শিক্ষক সপ্তাহে শুক্র-শনি এ দুদিন শিক্ষার্থীদের গান ও কবিতা আবৃত্তি শেখান। ওই ৮জন শিক্ষকের তদারকি করেন দুইজন জেন্ডার প্রমোটর। আর প্রতিটি ক্লাবে ৩০জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এতে ৮ ক্লাবের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা দাড়ায় ২৪০ জন।
সপ্তাহে দুই দিনে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য সরকারিভাবে খাবারের বরাদ্ধ ৬০ টাকা করে। এতে ওই ২৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি সপ্তাহে খাবার বাবদ বরাদ্ধ ১৪ হাজার চারশত টাকা। আর পুরো মাসে তাদের খাবারের বরাদ্ধ দাড়ায় ৫৭ হাজার ছয়শত টাকা।
জেন্ডার প্রমোটর আলিমুতেন্নেছা ও শিক্ষক স্মৃতি আক্তার ছোঁয়া এদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে সপ্তাহে দুইদিন প্রতি শিক্ষার্থীকে দশ টাকা দামের একটি সিঙ্গারা বা একটি কেক দেয়া হয়। একদিন শুধু ডিম দেয়া হয়েছিল। সেটিও সেদ্ধ করে দেয়া হয়নি। প্রতি শিক্ষার্থীর খাবার বরাদ্ধ ত্রিশ টাকা হলেও অফিসে এটি বলার সুযোগ নেই। খাবারের বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে অফিসের লোকজন ধমক দেয়, বলে তোমাদের এসব বুঝতে হবে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অতি লাভের জন্য অফিসের একটি চক্র পাইকারি দরে নিম্ন মানের কেক-সিঙ্গারা কিনে শিক্ষার্থীদের দেয়। এতে প্রতি পিস কেক-সিঙ্গারায় তারা লাভ করে তিন টাকা করে। অন্যদিকে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খাবারের টাকাও যায় তাদের পকেটে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকবার কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে জেন্ডার প্রমোটর ও শিক্ষকদের।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের খাবারের বরাদ্ধ ত্রিশ টাকা হলেও ভ্যাট বাদে থাকে পঁচিশ টাকা। তবে তার দাবি খাবার যথাযথ দেয়া হচ্ছে। প্রথমে নিজের যুক্তিতে অনড় থাকলেও বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে জানান, খাবারের এমন অনিয়মের বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
মোহনগঞ্জের উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।