বাবলী আকন্দঃ আজ শহীদ মিন্টু দিবস। ১৯৬৯ সালের গণ অভুত্থানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন ২০ জানুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে আসাদ নিহত হন। তারই ধারাবাহিতায় সারাদেশের মতো ময়মনসিংহেও এই আন্দোলন দানা বাঁধে। আসাদের মৃত্যুর প্রতিবাদে হাজারো ছাত্র জনতা ঢাকা ক্রেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জমা হয় এবং ক্রেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটির আহবানে ২২,২৩,২৪ জানুয়ারি ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বিত আন্দোলন বেগবান হয়।
২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নাসিরাবাদ কলেজ প্রাঙ্গণ হতে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের সামনে আসতেই পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। গুলিতে আলমগীর মনসুর মিন্টু মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। পরপর আরেকটি গুলি ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজন ছাত্রের পা ছুঁয়ে বের হয়ে যায়। তিনি আহত হন। তার গ্রামের বাড়ি হালুয়াঘাট। ছাত্রদের উত্তাল জোয়ার থেমে থাকেনি। পুলিশের টিয়ারগ্যাস আর লাঠি চার্জে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। রাজপথের একজন সক্রিয় প্রগতিশীল ছাত্রনেতা হিসেবে মিছিলের অগ্রভাগে থেকে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা আর আদর্শিক জায়গা তুলে ধরেছিলেন শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টু।
বর্তমান গৌরীপুর সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন এমপি স্মৃতিতে স্মরণ করে বলেন, মিছিলে গুলিবিদ্ধ আলমগীর মনসুর মিন্টু’র লাশ তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফয়জুর রাজ্জাক এর কথায় নিয়ে যাওয়া হয়। মোড়ে মোড়ে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বর্তমান এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম এর টাউন হল ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টারের কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হামিদুল হক জানান,তিনি রাজপথের অন্যতম নায়ক ছিলেন। সেসময়ে আবুল হাসনাত, মকবুল হোসেনসহ অন্যান্য ছাত্রনেতাদের সান্নিধ্যে ছিলেন আলমগীর মনসুর। শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টু’র বড় ভাই জাহাঙ্গীর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তার এক বোন আনন্দমোহন কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছেন।
তাঁরা থাকতেন আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার সংলগ্ন কবরস্থানের পেছনে বর্তমান কাউন্সিলর মিন্টু এর বাসার পাশেই। পরবর্তীতে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং রফিক উদ্দীন ভুইঞা এর সহযোগিতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এর উদ্যোগে শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজটি অস্থায়ীভাবে মরাখলা সিংহ সম্বলিত বাসার ভেতরে ছিল পরে তা সি কে ঘোষ রোডে স্থানান্তরিত করা হয়।
উল্লেখ্য, শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টু ঢাকা জেলার ধামরাই থানার কেলিয়া গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মনসুর আলী,তিনি কাচারিতে কর্মরত ছিলেন। মাতার নাম সুফিয়া মনসুর। তার বড় ভাই হাসান মুনসুর আমেরিকা প্রবাসী। তাঁরা ৫ ভাই ২ বোন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে মিন্টু ছিলেন ৩য়।
এদিনকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে উক্ত প্রতিবেদককে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, আজকের দিনে সকাল ৯.০০ টায় তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে জেলার সকল নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া শহীদ আলমগীর মনসুর স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ওসমান গণি সুমন জানান, তার কবরস্থানে সকালে দোয়া ও মুনাজাত করা হবে। তিনি ২৪ জানুয়ারি এ দিনটিকে সার্বজনীনভাবে মিন্টু দিবস হিসেবে পালনের আহবান জানান।