সাইফুল আরিফ জুয়েল, (মোহানগঞ্জ) নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসেন গৃহবধূ পান্না আক্তার (২০)। চেকআপ করার পর জানানো হয় অবস্থা জটিল অপারেশন করাতে হবে দ্রুত ময়ময়সিংহ নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পাশে থাকা একজনের মাধ্যমে জানানো হয় হাসপাতালে নয়, ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে গেলে এই অপারেশন সম্ভব। অবশেষে বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনরা প্রাইভেট চেম্বারেই অপারেশন করান সাড়ে সাত হাজার টাকায়।
চিকিৎসা সেবা নিয়ে ব্যক্তিগত বাণিজ্যের এমন অভিযোগ উঠেছে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাকের আহমেদ জনির বিরুদ্ধে এবং গৃহবধূ পান্না আক্তারের বাড়ি উপজেলার গাগলাজুর ইউপির কামালপুর গ্রামের তরিকুল ইসলামের স্ত্রী।

রোগীর স¦জনদের অভিযোগ, একই ডাক্তার হাসপাতালে বসে রোগীকে জটিল বলে রেফার্ড করে দিলেন। তিনিই আবার নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে কিভাবে চিকিৎসা দিলেন।
রোগীর মা মিনা আক্তার সোমবার দুপুরে জানান, গত রবিবার ভোরে স্থানীয় ধাত্রী দিয়ে আমার মেয়ের নরমাল ডেলিভারি করাই। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। পরে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। চেকআপ করার পর অপারেশন করতে হবে বলে ময়মনসিংহ রেফার্ড করা হয়।
কিন্তু ডাক্তারের একজন লোক এসে আমাদেরকে বলে এখানেই এই চিকিৎসা সম্ভব। শাকের স্যার ডিউটি শেষে ১টার পরে নিজের কোয়ার্টারে অপারেশন করবেন। এতে আপনাদের ঝামেলা কম হবে। সাড়ে সাত হাজার টাকায় অপারেশন করাতে রাজি হয়। নিজ কোয়ার্টারে অপারেশন শেষে রাতে হাসপাতালে এনে রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেন ডাক্তার। তারপর থেকে এখানেই চিকিৎসা চলছে। তিনি ওষুধ লিখে দিয়েছেন কিনে এনে খাওয়াচ্ছি এখন রোগী অনকেটাই ভাল মনে হচ্ছে।
তবে ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের চেয়ে কম যান না নার্সরাও। রোগীকে অপারেশন শেষে হাসাপাতালে ভর্তির পর শরীরে একটা পাইপ লাগাতে গিয়েও চারশত টাকা দাবি করেন রেহেনা খানম নামের এক নার্স। তার বক্তব্য ‘প্রাইভেট চিকিৎসা করে হাজার হাজার টাকা দিতে পারেন, আমাদেরকে কয়েকটা টাকা দিলে কি সমস্যা।’
স্থানীয়রা জানায়, মোহনগঞ্জ হাসপাতালে রোগী নিয়ে বাণিজ্য করে এখানকার ডাক্তাররা। সামান্য সমস্যা হলেই সেটাকে জটিল বলে তারা অন্য জায়গায় রেফার্ড করে দেন। আর কিছু ডাক্তার এসবের সুযোগ নিয়ে রেফার্ড করা রোগীদেরকে তাদের নিয়োজিত দালাল দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা করেন। রেফার্ড দেখানো এবং পরে দালাল দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে সিকিৎসা করা এসব কিছু বাণিজ্যের একটা অংশ বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে ডা. শাকের আহমেদ জনি বলেন, হাসপাতালে এমন সব অপারেশন করার মতো সব ধরণের যন্ত্রপাতি নাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশকিছু যন্ত্রপাতি কিনে আমার বাসার চেম্বারে রেখেছি। যেসব রোগীকে ময়মনসিংহ যেতে হয় বড় সমস্যার কারণে, তাদের চিকিৎসা কম টাকায় আমার নিজের চেম্বারে করি। এতে তাদের টাকা বাঁচার পাশাপাশি যাতায়াতের হয়রানি থেকেও মুক্তি পান রোগীরা।
বিষয়টি অবগত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুবীর সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রেফার্ড করা রোগীকে নিজের চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা করা অনৈতিক। হাসাপাতালে অপারেশন থিয়েটার নাই তবে ছোটখাট অপারেশন করার মতো ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি সবই আছে। বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান তিনি।