শিমুল শাখাওয়াতঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক পূর্বধলার কৃতি সন্তান মুহ. আব্দুল হাননান খান আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
আজ রবিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বেশ কিছুদিন যাবত বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩১৮ এর সংসদ সদস্য জাকিয়া পারভীন খানম মনি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আরিফুজ্জামান, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন শিমুল ।
নামঃ মুহ. আবদুল হাননান খান
পিতার নামঃ মরহুম আবদুল আলী খান
মাতার নামঃ মৃত রৌশন আরা বেগম।
স্থায়ী ঠিকানাঃ- গ্রাম- খলিশাপুর খানপাড়া, পোষ্ট- খলিশাপুর, থানা-পূর্বধলা, জেলা- নেত্রকোণা ।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ (ক) এম. এ (ইংরেজি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাল-১৯৬৫ খ্রি.। (খ) এল. এল. বি.ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, সাল-১৯৭৩ খ্রি.।
ছাত্র জীবনঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালীন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মরহুম আবদুল ওয়াদুদ খানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন। কলেজ জীবনে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুদয়াল কলেজে অধ্যায়ন। হাবিবুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসেবে এলাকায় নেতৃত্ব দান। ১৯৬১ সালে তৎকালীন স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর জনসভা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এর ফলশ্রæতিতে কিশোরগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাত্রকালীন সময়ে তার সাথে একই প্লাটফর্মে রাজনীতি করার সৌভাগ্য হয়েছিল্। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করে ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ বৎসর কার্জন হলে অনুষ্ঠিত কনভোকেশন (যাতে তৎকালীণ গভর্নর মোনায়েম খান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় চ্যান্চেলর হিসেবে প্রধান অতিথি ছিলেন) প্যান্ডেল ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং মোনায়েম খানের হাত থেকে সার্টিফিকেট গ্রহন করতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীগণ অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। কনভোকেশন ভন্ডুল হয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রামের বাড়ি হতে পূর্ব পাকিস্তান জন নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস পর তিনি মুক্তি পান। ঐ কনভোকেশন মামলায় ৬ মাসের জেল হয়েছিল।
অধ্যাপনাঃ
১৯৬৫ সাল থেকেই বিভিন্ন কলেজে ইংরেজী বিভাগে অধ্যাপনা ঃ
১। ব্রাহ্মনবাড়িয়া কলেজ।
২। মৌলভীবাজার কলেজ।
৩। নাসিরাবাদ কলেজ, ময়মনসিংহ।
৪। আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন। জামালপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক। ১১ নং সেক্টরের ঢালু সাব সেক্টরে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন।
স্বাধীনতার পরঃ
অধ্যাপনায় ফেরত। নকল বিরোধ আন্দোলনের সংগঠক। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত। স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে মিলিশিয়া বাহিনী গঠনে সক্রিয় ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের প্রক্রিযায় অংশ গ্রহন এবং সংসদের গঠনতন্ত্র কমিটিতে সদস্য হিসাবে অংশ গ্রহন।
সরকারী কর্মজীবনঃ
১৯৭৩ সালে বিসিএস প্রথম ব্যাচে পুলিশ বিভাগে এএসপি হিসেবে যোগদান। ১৯৭৩ সালে সারদায় প্রথম ব্যাচে প্রথম স্থান অর্জন। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ সিকিউরিটি সেল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাংগাইল, নোয়াখালী, বগুড়া, বান্দরবান ও সিআইডিতে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য বিষয়ঃ
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা”র প্রধান তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ। পলাতক আসামী মেজর বজলুল হুদাকে ব্যাংকক থেকে আনয়নের জন্য সরকারী ভাবে মনোনয়ন। এছাড়া ও জেল হত্যা মামলা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার ও তদন্ত তদারকি অফিসার হিসাবে নিয়োগ। ২০০০ সালে ঢাকা রেঞ্জের অতিঃ ডিআইজি হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় চাকুরী শেষে অবসর গ্রহণ করেন।
রাজনীতিতে অংশ গ্রহণঃ
সরকারী চাকুরী হতে অবসর গ্রহনের পরপরই আওয়ামী লীগে যোগদান এবং এলাকায় দলকে শক্তিশালী করনের লক্ষে ব্যাপক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে মনোনয়ন প্রার্থী কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তদন্ত তদারকীতে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বিব্রত বোধের আশঙ্কায় মনোনয়ন দেয়া হয় নাই। ২০০৮ সালে তৃণমূল পর্য্যায়ে ভোটে তিনি প্রথম স্থান পান।
বর্তমান অবস্থানঃ
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত সংস্থার প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় এবং তদন্ত কার্যক্রম মোটামোটি স্থবির হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে তাঁকে আইজিপি পদ মর্য্যাদায় তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে স্থিমিত সংস্থা গতি ফিরে পায়। তার নেতৃত্বে তদন্ত সংস্থার সকল তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিশ্রমের ফলে ইতোমধ্যেই জাতি এর সুফল পেতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত অনেক গুলো মামলার রায় ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্য্য সম্পন্ন হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মামলার রায় কার্যকর হয়েছে।
কয়েকটি মামলার বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। স্বাধীনতার ৪২ বৎসর পর জাতি কলঙ্কমুক্ত হতে যাচ্ছে এ প্রচেষ্টায় তাঁর ক্ষুদ্র অংশীদারিত্বে তিনি এবং তাঁর পরিবার অত্যন্ত গর্বিত। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলার তদন্ত তদারকিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাতেও তিনি গর্বিত।
সামাজিক অবস্থানঃ
০১। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলাধীন শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি।
০২। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলাধীন শিমুলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি।
০৩। পিতামাতার নামে প্রতিষ্ঠিত, আলী-রওশন ফাউন্ডেশন- এর চেয়ারম্যান ও আলী-রওশন স্মৃতি পাঠাগার নামে পূর্বধলা উপজেলায় একটি পাঠাগার স্থাপন।
০৪। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলাধীন শ্যামগঞ্জ হাফেজ জিয়াউর রহমান কলেজের পরিচালনা পরিষদের জীবন সদস্য।
০৫। অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থা (অমাস) নেত্রকোনা, এর প্রতিষ্ঠতা সভাপতি।
০৬। নেত্রকোনা জেলার ইতিহাস, গ্রন্থের সম্পাদক-প্রকাশক।
০৭। সভাপতি নেত্রকোনা জেলা সমিতি, ঢাকা।
০৮। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির নির্বাচিত প্রথম সহ-সভাপতি।
০৯। নেত্রকোনা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জীবন সদস্য।
১০। ভাষা সংগ্রামে নেত্রকোনা, সম্পাদক মন্ডরীর প্রধান উপদেষ্টা।
১১। নেত্রকোনা অতীত বর্তমান, সম্পাদক মÐলীর প্রধান উপদেষ্টা।
১২। নেত্রকোনা জেলা সমিতি ঢাকার, বর্তমান সভাপতি।
১৩। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকার, বর্তমান প্রথম সহ-সভাপতি।
সম্মাননা প্রাপ্তিঃ
১। নিউইয়কস্থ বাংলাদেশ-আমেরিকার সাংবাদিক ফোরাম কর্তৃক সনদ প্রদান-২০১৭।
২। মণিসিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্র্যাষ্ট কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির স্মারক ২০১৭।