মো. সাকের খান, মদন (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার মদন উপজেলার বালালী বাঘমারা খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা বজলুর রহমান ও সভাপতি আবুল মিয়ার বিরুদ্ধে একজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন আয়া নিয়োগের জন্য ৫ জনের কাছ থেকে ২৪ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গে বাজে আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ১১ অক্টোবর ২০২০ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে ১১ জন, আয়া পদে ৬ জনসহ মোট ১৭ জন আবেদন করেন।
নিরাপত্তা কর্মী পদে ১১ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭ জন। অপর দিকে আয়া পদে ৬ জন অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য থেকে নিরাপত্তাকর্মী পদের আপেল, মোজাম্মেল ও লেমন এবং আয়া পদে নূসরাত জাহান ও মদিনা, এর কাছ থেকে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা বজলুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল মিয়া দুই পদের জন্য ৫ জনের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা অনৈতিকভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে উৎকোচ গ্রহণ করেন।
১৩ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা শেষে নিরাপত্তা কর্মী পদে লেমন ও আয়া পদে মদিনাকে চাকরি নিশ্চিত করে। বাকি তিন জনের ১৫ লক্ষ টাকা সভাপতি ও সুপার ফেরত দেন। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিভিন্ন অফিস খরচ হয়েছে বলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের জানান, এ নিয়ে সুপার ও সভাপতির সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরে মিটিং শেষ না করেই সবাই চলে যায়।এজন্য উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে নিয়োগপত্র দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, এই ২ পদে এর আগেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। তাদের মন মত না হওয়ায় নিয়োগ দেয়নি।
পরবর্তী অক্টোবর মাসে আবারো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সুপার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অনৈতিকভাবে নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদের আবেদনকারী ৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। তার মধ্যে চাকরি না হওয়া তিন আবেদনকারীকে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন।
নিরাপত্তা প্রহরী পদে আবেদনকারী আপেল মিয়া উক্ত প্রতিনিধির কাছে ছয় লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন আমাকে সুপার ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে বাকি টাকা দিবে বলে দিচ্ছে না
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া টি আমরা সঠিকভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে কিছু না বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন ।
ঘুষ নিয়ে নিয়োগের ব্যাপারে তারা বলেন, প্রথমে এ ব্যাপারে আমরা কিছু শুনিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জনসম্মুখে আসে এবং সভাপতি ও সুপার তিনজনের কিছু টাকা টাকা ফেরত দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি।
মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল মিয়া বলেন, আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং মেধাভিত্তিক সম্পন্ন করেছি। প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মাদ্রাসা সুপার মাওলানা বজলুর রহমান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে। যোগদানপত্র প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সাথে একমত না হওয়ায় যোগদানপত্র দিতে পারি নি। ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি আমি শুনেছি। লিখিত কোন অভিযোগ পাই নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল গফুর জানান, ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।