বাবলী আকন্দঃ দীর্ঘদিন যাবত ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠনের একটি জোরালো দাবী ময়মনসিংহে একটি সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপন। যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। ময়মনসিংহ সংস্কৃতি শাখায় সমৃদ্ধ হলেও বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর চর্চা, কার্যক্রম পরিচালনা করার স্থান না থাকায় এর ঐতিহ্য ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যেকারণে শিল্পীগণ সংস্কৃতিতে ময়মনসিংহের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তাদের প্রত্যাশা ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপন করে সেখানে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর চর্চা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতিতে এর স্রোত বেগবান করা যাবে এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ধারণ করে বিশ্বের বুকে তুলে ধরা যাবে। তাদের এ দাবি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী’র নিকট তুলে ধরার জন্য প্রায় ৫০ টি সংগঠন একাত্ততা প্রকাশ করে একত্র হয়েছে ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক পল্লী বাস্তবায়ন পর্ষদ হিসেবে। উক্ত পর্ষদের আহবায়ক কাজী আজাদ জাহান শামীম এবং সদস্য সচিব মোঃ আবুল মনসুর এর পরিচালনায় আজ ২৯ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বরাবর ৫০ টি সংগঠনের পক্ষে স্মারকলিপি তুলে ধরেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহের সকল সাংস্কৃতিক কর্মী,শিল্পীদের যে দাবী সেটি যোক্তিক দাবী। শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা মহামারী করোনার জন্য সব ভেস্তে গেল। সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণের বিষয়ে তিনি সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে আশ্বস্ত করেন।
সাংস্কৃতিক পল্লী বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য সাময়িকভাবে শিল্পীদের সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য জায়গা প্রদানের আবেদন জানালে জেলা প্রশাসক বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকা ছেড়ে সরকারী জায়গা কোথাও থাকলে সেখানে তিনি ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদকে আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত রেখে যেতে চান। সাংস্কৃতিক শিল্পীরা কখনো দখলবাজ হতে পারে না বলেই শিল্পীদের প্রতি তিনি তাঁর বিশ্বস্ততার কথা জানান।
এসময় সেতুবন্ধন কল্যাণ সংস্থার সভাপতি হিজড়া তনু দৃঢ় কন্ঠে জানান,নদীতীরবর্তী এলাকা কাচারিঘাটে ছোট একটা অফিস করেছিলেন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় তিনি সেখান থেকে নিজেদের অফিস গুটিয়ে নেন। কিন্তু করোনা আসার পর হিজড়াদের ঘর ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা পলিথিন মুড়িয়ে সেখানে রাত পার করছেন। তারা এখন কোথায় যাবে! কোথায় ঠাঁই হবে তাদের! এ প্রশ্ন রেখেই তিনি বলে উঠেন, আমরা হিজড়ারা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবো।
এসময় জেলা প্রশাসক তাদের আশ্বস্ত করেন তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)দের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া হাতে নিবেন বলে জানান তিনি।
স্মারকলিপি তুলে দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, লোককৃষ্টি সংস্থার আবুল কাশেম, ময়মনসিংহ একাডেমী অব ফাইন আর্টস এর নাজমুল হক লেলিন, সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের এ হান্নান আল আজাদ,নৃত্য প্রশিক্ষক সাজেদুল ইসলাম সাজু, রঙ্গভূমি থিয়েটারের সদস্য, নিথুয়া একাডেমী সভাপতি বাবলী আকন্দ, থিয়েটার সংলাপের রজদ কান্তি দেবনাথ, ভিশন নাটাঙ্গনের নাজমুল হাসান খান রাজুসহ ৫০ টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।