কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : নেত্রকোনায় আবু আব্বাছ কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির জারিকৃত নির্দেশনাবলীর মারপেচ বা ফাঁক-ফোকরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা উন্নয়ন বাবদ ফি দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনায় কোভিড-১৯ এবং অভিভাকদের আর্থিক বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখার বিধান থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচ মাসের অগ্রিম বেতন বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকাও আদায় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখায় দেখা দিয়েছে ৩০ শতাংশ ছাত্রী শিক্ষার্থী উপবৃত্তিতে পাঁচ মাসের বেতন মওকুফ হলে কিভাবে সমন্বয় করা হবে।
শনিবার (৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আবু আব্বাছ কলেজে গিয়ে জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষে ১০১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মানবিক শাখায় ৯৪৯ জন, বিজ্ঞান শাখায় ৫২ জন ও ব্যবসা শিক্ষা শাখায় ১০ জন রয়েছে। মোট ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৮২ জন ছাত্রী রয়েছে। এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা করে ১১০ জন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আর্থিক দিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আর বাকী সকল শাখার সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একহারে পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। যেখানে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির জারিকৃত নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা আছে পৌর (জেলা সদর) এলাকায় সর্বসাকুল্যে দুই হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
কিন্তু নেত্রকোনা আবু আব্বাছ কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সেশনচার্জ সহ ভর্তি ফি দুই হাজার, পাঁচ মাসের বেতন বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ননএপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য উন্নয়ন ফি এক হাজার ৫০০ টাকা নির্দেশনাটির মারপেচ বা ফাঁক-ফোকরে জেলায় পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবু আব্বাছ কলেজ কর্তৃপক্ষ তা আদায় করেছে। মোট ১০১১ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী থেকে আর্থিক বিবেচনায় ১১০ শিক্ষার্থী বাদ দিলে ৯০১ জান শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে ১৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে জানা যায়, এমপিওভূক্ত মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যন্য মেট্রোপলিটান এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
এর বাহিরে ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাাকায় আংশিক এমপিওভূক্ত বা এমপিও বহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি সহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৫০০ টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৫০০ টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। যা ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকার জন্য ইঙ্গিত বহন করে।
এ বিষয়ে শনিবার (৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ পূর্বময়কে বলেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিয়েছি। পরে আদায়কৃত সেশন চার্জের দুই হাজার টাকার খাত ভিত্তিক বিভাজন ও উন্নয়ন ফি এক হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের রেজুলেশন দেখতে চাইলে তিনি বলেন, জবাবদিহী করতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছে করব। রেজুলেশন খাতা কলেজের সভাপতি জেলা প্রশাসক তাঁর সাথে কথা না বলে দেখাতে পারব না।
শনিবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের সাথে ফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি পূর্বময়কে বলেন, করোনাকালে অভিভাবকদের আর্থিক দিক বিবেচনায় এক সাথে বেশি মাসের বেতন না ধরার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকার জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা উন্নয়ন ফি প্রযোজ্য তা জেলা পর্যায়ের কলেজে ধরা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্নের আলোকে তিনি বলেন, রবিবার (৪ অক্টোবর) অধ্যক্ষকে ডেকে জিজ্ঞেসা করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।