পূর্বময় ডেস্ক :
প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে ব্রিটিশ কোম্পানি ডেবেনহ্যামস। অথচ পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছে না এ দেশের চাকরিচ্যুত কর্মীদের। সব মিলিয়ে ৬৯ জন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ প্রতিষ্ঠানের কাছে এখন পর্যন্ত পাওনা আছে সাড়ে ৮ কোটি টাকার মতো। এ বকেয়া বুঝে পেতে এবার মাঠে নেমেছেন এই কর্মীরা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত ও ন্যায্য পাওনার দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন তারা।
ব্রিটিশ কোম্পানি ডেবেনহ্যামসের বাংলাদেশে লিয়াজোঁ অফিসের সাবেক কর্মকর্তাদের সংগঠন ডেবেনহ্যামস বাংলাদেশ এমপ্লয়িস ইউনিয়ন (ডিবিইইউ) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ তানভিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউটের (বাশি) ট্রাস্টি গোলাম মোর্শেদ। সংবাদ সম্মেলনে ডিবিইইউর নেতারা, চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডেবেনহ্যামসের চাকরিচ্যুত এ কর্মীরা জানান, বাংলাদেশে সাত বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে এলেও কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ৬৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি, এমন অভিযোগও করেন তারা।
তাদের দাবি, কর্মীদের কোনো ধরনের পাওনা পরিশোধ ও শ্রম অধিকারকে সম্মান না করেই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেছে ডেবেনহ্যামস। তাছাড়া দেশের বিদ্যমান রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম না মেনে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক শ্রম আইন পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন তারা। অভিনব এ প্রতারণা এখনই বন্ধের দাবি তোলেন চাকরিচ্যুত এ কর্মীরা।
স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিস বন্ধে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কোনো নিয়ম মানেনি—এমন অভিযোগের তীর উঠেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে ডিবিইইউর সভাপতি বাহাউদ্দিন মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, ডেবেনহ্যামস বছরে বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিসের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু সেটাতে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না। এদিকে আমাদের পাওনাও বুঝিয়ে দিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধের জন্য কাট-অফ তারিখ নির্ধারণ করতে হয়। অফিস বন্ধের বিষয়টি একটি সর্বাধিক প্রচলিত সংবাদপত্রে বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে তিন মাস আগে প্রকাশিত হতে হবে। লিয়াজোঁ অফিস বন্ধ করার জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে একটি বোর্ড রেজল্যুশন দেখাতে হয়। এসব আইনি প্রক্রিয়া না মানার কারণে বাংলাদেশের সরবরাহকারী ও ভেন্ডররা এখন আমাদের নামে-বেনামে মামলা করে রেখেছে। ফলে আমরা একদিকে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছি, পাশাপাশি সামাজিক ও আইনি জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
পাওনা না পেয়ে ডেবেনহ্যামসের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিডা, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সদয় দৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করছি। ন্যায্য পাওনা বিশেষ করে এপ্রিলের বেতনসহ চার মাসের নোটিস পিরিয়ডের বেতন, দুটি উৎসব বোনাস, আর্ন লিভ ও গ্র্যাচুইটি বাবদ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা (১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থ প্রদানের দাবি করছি। এটি আমাদের শ্রম ও পরিশ্রমের ন্যায্য অধিকার। এ সময় প্রতিটি কর্মীর ন্যায্য এ অধিকার আদায়ে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে বাশির ট্রাস্টি গোলাম মোর্শেদ বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কোম্পানিটি আইন ও নিয়ম মানবে না—এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশে নিয়োজিত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো শিগগিরই এ বিষয়ে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ডেবেনহ্যামস বিশ্বের প্রায় ১৫০টি স্টোরের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বছরে ৯০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি করোনাকালে বাংলাদেশের লিয়াজোঁ অফিসের ৬৯ জন কর্মীকে অবৈধভাবে ছাঁটাই করে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ ও শ্রম অধিকারকে সম্মান না করেই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।