মো. সাকের খান (মদন থেকে) : নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের মগরা নদী ও বালন্দ বিলের সংযোগ পাহাড়পুর মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত আল হুলিয়া খালটি অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ উঠেছে। দখলকারীরা প্রভাব কাটিয়ে জেলেদের কাছে প্রতি বছর জমা দিয়ে ফায়দা লুটছে, সেই সাথে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, এলাকার অসাধু প্রভাবশালীরা মসজিদ ও মহল্লার নাম ভাঙ্গিয়ে আল হুলিয়া খালটি দখলে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। দখলদারদের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে খালটির নব্যতা। কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর না দেওয়ায় বেদখল হচ্ছে সরকারি এ খালটি।
বুধবার নৌ পথে আসা পালিশ মিয়া, আকবর মিয়া, শামসুদ্দিন, শাহাদাত ও মানিকসহ ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে মদন সদর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে হাওর এলাকার একমাত্র চলাচলের রাস্তার এ খালটি পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ করে। নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় দখলকারীরা তাদেরকে গালি গালাজ করে।
এ ব্যাপারে ধোবাওলা গ্রামের মিল্টন মিয়া, ছোটন মিয়া, রহিস উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন তালুকদার মিটু ও পল্লী চিকিৎসক ছোটন মিয়া এ খালটি অবৈধভাবে দখল করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন তালুকদার মিঠু এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের গ্রামের কয়েকটি পাড়া ভাগ করে পূর্বে থেকেই এ খালটি ভোগ দখল করে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাল ফেলে মাছ ধরছি। এ খালের একটি অংশ সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেলাল উদ্দিন তালুকদার ও ভোগ দখলে রেখেছেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই এ খালকে সরকারের রাজস্ব আওতাভুক্ত এনে ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক নতুবা এ খালকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা এমনকি খুন-জখমের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেলাল উদ্দিন তালুকদার জানান, এ খাল দিয়ে ভাটি অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় এ দিক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেক লোকজন লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। আমি চাই এই খাল উন্মুক্ত হোক এবং আমার বিরুদ্ধে যে অভিযুক্ত উঠেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ইউপি চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই খালটি প্রভাবশালীদের কাছ থেকে মুক্ত করে রাজস্ব খাতে আনলে এ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আতিকুল ইসলাম জানান, আল হুলিয়া খালের তথ্য জানা নাই। তথ্য জেনে তারপর বলতে হবে।
এ ব্যাপারে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, আল হুলিয়া খালটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যদি কেউ দখল করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।