কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : ময়মনসিংহ হতে বেড়াতে এসে টলার ডুবি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। নেত্রকোনার মদন উপজেলায় মিনি কক্সবাজার হিসাবে পরিচিতি পাওয়া উচিতপুরে বেড়াতে এসে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে রাজালি কান্দা হাওরে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে ময়মনসিংহ সহ নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা নানা বয়সের মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিবারের লোকজনসহ ৪৮ জন পর্যটক ট্রলারে ওঠে মদন উচিৎপুর ঘাট থেকে রাজালীকান্দার রামদীঘা বিলে পৌঁছেতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পর্যটনবাহী ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ে ট্রলার ডুবিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৬ জন। এবং ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৬ শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন, মাহফুজুর রহমান (৪৫), শফিকুর রহমান (৪০), ইসা মিয়া (৪০), আজহারুল ইসলাম (৩৮), মাহমুদ মিয়া (১২), আসিফ (১৫), সামাআন (২০), রেজাউল করিম (১৬), মুজাহিদ মিয়া (১৭), হামিদুল ৩৫), সাইফুল ইসলাম রতন (৩০) জুবায়ের (২২), জহিরুল ইসলাম (৩৫), জাহিদ (২০), রাকিব (২০), লুবনা আক্তার (১০), জুলফা আক্তার (৭)। নিখোঁজ রয়েছেন একজন।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মদনের উচিৎপুর ঘাটে ট্রলার চালক অতিরিক্ত বোঝাই করে ২০/২৫ জনের নৌকায় ৪৮ জনের মতো যাত্রী তুলে মদনের সামনের হাওরে যায়। এসময় প্রবল বাতাসে ও নৌকায় নড়াচড়া করার কারণে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে সাঁতরে ৩০ জনের মতো তীরে উঠতে পারলেও বাকিরা ডুবে যায়।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নেত্রকোনা ও মদন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খানে আলমের নেতৃত্বে ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ একজনকে উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী গোবিন্দশ্রী পশ্চিমপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হক মান্না জানান, ওরা আসছিল বেড়াতে পানি দেখার জন্য। এখানটায় ঢেউ বেশি ছিল। ট্রলার ঘুরাতে গিয়ে নৌকা উল্টে যায়। এ দৃশ্য দেখে নিজ দায়িত্বে উদ্ধারের চেষ্টা করি। প্রথমে দুটি বাচ্চাকে মৃত উদ্ধার করি। সেইসাথে ৩০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে ফোন করে জানানো হলে পরে তারা আসলে তাদের সাথে গ্রামের অনেকে ডুবুরি কাজ করে ১০টি লাশ উদ্ধার করে। আমরা স্থানীয়রা ২ শিশুসহ ১২টি ও ৫টি ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা লাশ উদ্ধার করেছে। আরো ৪ জন শিশুর লাশ উদ্ধার হলে, এ নিয়ে ৬ শিশু লাশ উদ্ধার করা হয়।
নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খানে আলম খান জানান, আমরা দুপুর ১টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। জানতে পারি ৪৮ জন লোক ময়মনসিংহের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ছিল ট্রলারের যাত্রী। ৩০ জন যাত্রী জীবিত উদ্ধার হলে ১৮ জন নিখোঁজ থাকে। স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের দল ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। একজন নিখোঁজ রয়েছে তাকে উদ্ধারের জন্য ময়মনসিংহ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসেছে। তারা উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মদন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বুলবুল আহমেদ জানান, আজকে হাওড়া বাতাস বেশি ছিল, সেই সাথে পানিও উত্তাল ছিল। যতটুকু জানতে পেরেছি বেড়াতে ৪৮ যাত্রী এসেছিল। তারা বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা দুর্ঘটনাটি তদন্ত করে দেখব।