কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : করোনার মহামারিতে শরু হয়েছে পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফায় বন্যা। ফলে মানুষ একটি বিপদের মধ্যে আবারো আরেকটি বিপদের সম্মুখীন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষগুলো নিজেরা কোন রকম ঘরে থাকার ব্যবস্থা থাকলেও গবাদি পশু নিয়ে তারা দিশেহারা। সড়কে বা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে রাখছেন তাদের পশু গুলো। কারো কারো চলার একমাত্র সম্বল গরু বাছুর। সামনে ঈদুল আহজায় কোরবানীর পশু নিয়েও বিপাকে তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দূর্গাপুর, সদর বারহাট্টায় কংশ, সোমেশ্বরী ও উব্দাখালি নদী উপছে পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পরিবার।
এছাড়াও জেলার হাওলাঞ্চলের মদন মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরিসহ আটপাড়া, পূর্বধলার জারিযার নিচু এলাকাতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক যোগযোগ অনেক জায়গায় বন্ধ রয়েছে। মানুষ নৌকা বা ট্রলারে চলাফেরা করছেন। ডুবন্ত সড়কের একপাশ থেকে অন্য পাশে যেতে ব্যবহার করছেন নৌকা। সদর উপজেলার কে গাতী ইউনিয়নের নারিয়া পাড়া গামে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। ইউনিয়নটি কংশ নদীর তীরে হওয়ায় প্রতিবছর পানিতে তলিয়ে যায়।
বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় সড়কে বেধে রেখেছেন যতেœ গড়া গরু বাছুর। নিজেরা চিড়া মুড়ি খেয়ে দিনানিপাত করলেও গরু বাছুর নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
বয়োবৃদ্ধ মহিউদ্দন জানান, তাদের গ্রামের যে সকল বাড়িগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের সকলেরই গরু বাছুর নিয়ে রাস্তায় রেখেছে। একে তো চোরের উপদ্রব। অন্যদিকে গো-খাদ্যের সংকট। সারারাত গুরু পাহাড়ায় নিজেদেরকে সড়কে থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকার পানি নেমে গেলেও দেখা দিয়েছে নানা রোগের। পাশাপাশি অনেকের গরু নিয়ে প্রাণি সম্পদ অফিসে ছুটতে হচ্ছে এই মহামারিতেও। এসকল দূর্গত এলাকার মানুষ গরুর খাবার নিয়ে বিপাকে। ফলে ঈদুল আজাহায় দাম কমে যাবে তাদের পশুগুলোর।
তিনি আরো জানালেন, তার একমাত্র সম্বল এই গরু। ঈদুল আজহায় তাদের একটি ষাড় বিক্রি করারও কথা ছিলো। কিন্তু সে পর্যন্ত গরুকে তিনি বাঁচাতে পারবেন কিনা এটি নিয়েই শঙ্কায়। বাঁচাতে পারলেও সঠিক দাম পাবে না বলেও তিনি জানান। খামারিদের ক্ষতি হলেও তারা নানা ঋণ নিয়ে পুষিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা যারা কৃষক বা ক্ষুদ্র মানুষ আমাদের তো কোন পথ নাই মরণ ছাড়া।
এদিকে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন থেকে গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো সাধারণ গরীব মানুষেরা পাবে কিনা তাও নিয়ে সন্দিহান এসকল গ্রামের মানুষেরা।