বাবলী আকন্দঃ একজন ১১বছরের মারুফা মরে নি, তাঁকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। তাঁকে তিলে তিলে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করতে করতে মারুফা শেষ নিঃশ্বাসটা ফেলেছে। আর আকুতি জানিয়ে চিৎকার করেছে আমার হত্যার বিচার যেন এ মাটিতেই করা হয়। আমরা শুনি নি তাঁর আর্ত চিৎকার। কিন্তু যন্ত্রণাটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি। এ যন্ত্রণাটুকু কি উপলব্ধি করতে পেরেছে সেই নরপিশাচ যার নিজের ঘরেও মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা আছে। করেনি। মেরেই ফেলল মারুফা নামের মেয়েটিকে।
গতকাল ময়মনসিংহ শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মারুফা মঞ্চের আয়োজনে নেত্রকোনার গৃহকর্মী মারুফা হত্যার ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহবাসী।
এসময় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি অধ্যাপক দিলরুবা শারমিন, ময়মনসিংহ জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এড নজরুল ইসলাম চুন্নু, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জিনাত রেহানা,নেত্রকোনাস্থ মোহনগঞ্জ সমিতির সভাপতি মো: ইকবাল হোসাইন,ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের অাহবায়ক আবুল কালাম আল আজাদ,বারহাট্রার সিংধা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মহিলা সদস্য সন্ধ্যা রানী রায় প্রমুখ। মারুফা মঞ্চের আহবায়ক এবং যুব মহিলা লীগ নেত্রী মাহমুদা মলিসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রতিবাদ সমাবেশের সঞ্চালনায় ছিলেন জাগ্রত ময়মনসিংহের সদস্য সুমন চন্দ্র ঘোষ।
পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তাঁর মা তাঁকে একই এলাকার ধনীওয়ালা বারহাট্রার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চন চেয়ারম্যান এর কাছে থাকতে দেয় কাজের পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য। মারুফার বড্ড শখ ছিল স্কুলে পড়ার। তাই সে মায়ের কথায় কাঞ্চন চেয়ারম্যানের বাসায় যায়। কিন্তু পড়াশোনা তো দূরের ব্যাপার তাকে ঝিয়ের কাজে ব্যস্ত রাখা হতো। আর রাত হলে মদ্যপ অবস্থায় ঘুমে থাকা মারুফার ছোট্ট শরীরে পিশাচের হাত ঘুরতো। মারুফা ভয়ে কুকঁড়ে যেত। বাবা হারা সন্তান মারুফা সে কয়েকবারই তাঁর মাকে জানায় ঘটনাগুলো।বলতে বলতে মারুফার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাঁর মা আকলিমা বেগম একদিন রাগ করে যায় চেয়ারম্যানের বাড়ি। আর চেয়ারম্যানের স্ত্রী তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। আবেগী প্রতারণা করে মারুফা মায়ের সাথে। মারুফার মায়ের ভাষ্যমতে, চেয়ারম্যানের বউ আমারে কইসে মারুফার মা তুমি মারুফারে লইয়া গেলে আমারে মাইরা লইয়া যাও। আমার সম্মান নষ্ট কইরোনা। তাগোর সম্মান দেখবার যাইয়া আমি আমার মাইয়াডারে হারাইসি। গরীব মানুষ হেগোর সম্মানডা বুজ্জসিলাম। আমার মারুফা কইসিলো, মা আমারে ঈদের মধ্যে লইয়া যাইবা,পরে আর দিবা না হেগোর কাছে। আমি তোমার হেইনে থাকবাম। ( মা,আমাকে ঈদের মধ্যে নিয়ে যাবে। পরে আমাকে আর তাদের কাছে ফেরত আনবে না। আমি আসবো না ওদের কাছে। মা, তোমার কাছে থাকবো।) আকুতি জানিয়ে মারুফা কথাগুলো বলেছিল মায়ের কাছে। মা তাকে কথা দিয়েছিল,ঈদের ছুটিতে নিয়ে যাবে আর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাবে। কিন্তু পিশাচ তা আর হতে দেয়নি। ছোট্ট শিশুটার ছোট্ট শরীরের যৌনাঘাত করতে করতে মেরে ফেলল। মারুফার মা জানান, মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনরা এর আগে মারুফার বাপরে মাইরা হালসে, কাঞ্চন চেয়ারম্যান অহন আমার ছেড়িডারে মাইরা ফেলছে। ( ইতিপূর্বে মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনরা মারুফার বাবাকে হত্যা করেছে এখন আমার মেয়েকেও মেরে ফেলল)
মারুফার হত্যাকে ধামাচাপা দিতে হত্যাকারী কাঞ্চন চেয়ারম্যানের যোগসাজসে ওসি মারুফার মাকে ডেকে নিয়ে মারুফা আত্মহত্যা করেছে মর্মে চেয়ারম্যানের সামনে স্বাক্ষর দিতে বলে। মারুফার মা স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যান এবং ওসি তাকে গালিগালাজ করে। গালিগালাজের পাশাপাশি মহিলা পুলিশকে দিয়ে জোর পূর্বক চেয়ারে আটকে রাখে।
অপরাধী প্রভাবশালী মহলের হওয়ায় অন্যায় করেও তা ধামাচাপা দিয়ে হত্যাটিকে আত্মহত্যা বলে পুষ্টমদদে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এদিকে থানা পুলিশ পোষ্টমর্টেম রিপোর্টের কথা বলে সময় নিয়ে যাচ্ছে। এসময় বক্তাগণ বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনায় শরীরে মারুফার প্রত্যক্ষ আঘাতের চিহ্ন থাকা স্বত্বেও পোষ্টমর্টেম এর কথা বলে কেন সময় দীর্ঘ করা হচ্ছে। অবিলম্বে আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান।
এসময় তারা আরো বলেন, অন্যায়কারী কোন দলের হতে পারে না, অন্যায়কারীদের কোন দল নেই,ধর্ম নেই। তারা সমাজে অপরাধী। আর সেই অপরাধীদের বিচার আইন করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।