নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এক মানবিক রিকশা ওয়ালা

Date:

Share post:

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন  : নিজের পুরাতন রিকশা বিক্রি করে মানবিকতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো এক রিকশা চালক। দারিদ্রতার কারণে নিজে সহ তার ভাইয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। লেখাপড়া শিক্ষিত হতে না পারার ব্যথা বুকে লালন করে তিনি রিকশা চালিয়ে নিজের ঘাম জড়িয়ে কষ্টার্জিত টাকা পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারের খরচ মেটানোর অবশিষ্ট উপার্জিত টাকা তিনি গত চার বছর যাবত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ূয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দিয়েছেন।

এর মধ্যে এ যাবত ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদ্রাসার হতদরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা। এসব শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা, কলম, পেন্সিল, পেন্সিল বক্স, টিফিন বক্স খেলার সামগ্রী  ফুটবল এ ধরনের উপকরণ বিগত কয়েক বছর কিনে এবং এ উপকরণগুলো তাদের মাঝে কয়েক বছর যাবত দিয়ে যাচ্ছেন।

শুধু তাই নয় করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রথম দিকে তার পরিশ্রমের উপার্জিত নগদ ১০ হাজার টাকা ইউএনও মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন। এ অর্থ সহায়তায় দুর্গাপুর নয় জেলাতে নয় পুরো দেশ জুড়ে এক রিকশা চালকের মানবিকতার পরিচয় প্রকাশ পায়।

গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে দেখা মেলে এক রিকশা চালক যিনি ৫০টি হতদরিদ্র পরিবারের অভিভাবকদের মাঝে ২০০ টাকা করে দিচ্ছেন। করোনাকালীন সময়ে স্কুলে যেতে না পারা শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, বই এ জাতীয় উপকরণ কিনে পারে দরিদ্র অভিভাবকরা।

এমন মানবিক রিকশা চালকের সন্ধান মেলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় সদর ইউনিয়নের চকলেংগুরা গ্রামের দরিদ্র মো. হেলিম মিয়ার ছেলে তারা মিয়ার (২৬)। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তারা মিয়ার মা-বাবা সহ স্ত্রী মিলে তার ৬ সদস্যের তার সংসার। আর ৩ ভাইয়ের মধ্যে সে বড়।

এই মানবিক রিকশা চালক তারা মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ২২ বছর যাবত তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গত ১ বছর আগেও তিনি ভাড়া নিয়ে রিকশা চালাতেন। পরে নিজে রিকশা কিনেছেন। পুরাতন রিকশা বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন তা তিনি ২০০ টাকা করে ৫০  জন হতদরিদ্র অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যাতে এ টাকা দিয়ে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারা ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা কলম এ জাতীয উপকরণ কিনে দিতে পারে তাদের অভিভাবকের।

পিতার দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। এই ব্যাথা তার বুকে এখনো বহন এবং ব্যাথার তাড়নায় তিনি হতদরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের পাশে দাঁড়াতে তার এই প্রয়াস। তার সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে চান তিনি।

রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে তিনি নতুন ব্যাটারী চালিত রিকশা কিনেছেন। পুরাতন রিকশাটি বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে দরিদ্র অভিভাবকদের দিয়েছেন এবং এধরনের মানবিক কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় বক্ত্য করেন এই মানবিক রিকশা চালক তারা মিয়া।

এই সমাজে তারা মিয়ার মত বিত্তবানরাও যদি একটু একটু করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলেই স্বপ্নের সোনার বাংলায় কোন ছেলে-মেয়েই আর শিক্ষার আলোর বাইরে থাকবে না। পারিবার থেকে শুরু করে সমাজ হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত। দুর্নীতি মুক্ত হবে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের মধ্যে স্বীকৃত পাবে একটি শিক্ষিত আত্ম-মর্যাদাশীল রাষ্ট্রের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

Related articles

চাঁদাবাজির দায়ে নেত্রকোনা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক বহিস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদাবজির দায়ে নেত্রকোনা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক রফিক খান মিল্কি ঝুনুকে (৩৫) দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।...

ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় প্রাক্কালেনেত্রকোনা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক সেনাবাহিনীর হাতে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনা পৌরশহরের অজহর রোড এলাকায় ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের সময় নেত্রকোনা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক জুনু খানা...

নেত্রকোণার দুর্গাপুরে প্রায় শত কোটি টাকার আমন ধানের ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েকদিন ধরে ঢল ও বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি দ্রুত কমতে...

নানা আয়োজনে নেত্রকোনায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস-২৪ উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক: “স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিষ্কার হাত সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ” এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে নেত্রকোনায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০২৪...