কে এম সাখাওয়াত হোসেন : সরকার অতি হতদরিদ্রের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের (ইজিপিপি) মাধ্যমে ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজ চালু করেছে। এ প্রকল্পে কাজ করে প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক হাজিরা বাবদ ২০০ টাকা করে ৪০ দিনে প্রকল্পকালীন ৮ হাজার টাকা পরিশ্রমিকের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে নির্ধারিত শ্রমিক থেকে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে দায়সারাভাবে ৪০ দিনের স্থলে ৩০ দিন কাজ করানো এবং নিয়মানুযায়ী প্রতি সপ্তাহের মজুরী পরিশোধের নিয়ম থাকলেও কাজ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬ মাস অতিবাহিত হলেও শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। বাকি ১০ দিনের অবশিষ্ট শ্রমিকের মজুরি ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও প্রকল্পের সভাপতিগণ আর্থিকভাবে লাভের আশায় আত্মীয়-স্বজনের নামে মাষ্টার রোল তৈরী করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বিল উত্তোলন করে তা লুট করার পাঁয়তারা করছেন।
এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৭নং নায়েকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান রোমান, সচিব হিরণ মিয়া ও প্রকল্প সভাপতিদের বিরুদ্ধে। গত ১৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) ববাবরে অভিযোগ দিয়েছেন ওই ইউপির বাসিন্দা শ্রমিক সর্দার সহ আরো অনেকে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭নং নায়েক ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় কর্মসৃজন কর্মসূচির (ইজিপিপি) প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ১৬ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার ৩টি প্রকল্পে ২০৪ জন শ্রমিক দিয়ে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী প্রকল্প মেয়াদে ৪০ দিনের এ কর্মসূচীতে ওই ইউপির ৩টি প্রকল্প হচ্ছে ৫৪ জন শ্রমিক দিয়ে মোয়াটি দক্ষিণপাড়া শেষ প্রান্ত হতে বরাটি ব্রামনদিয়া বিকচানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, ৮৩ জন শ্রমিক দিয়ে পাঁচআলমশ্রী চান মিয়ার বাড়ির পিছন হতে ফজলু মাস্টারের জমি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত এবং ৬৭ জন শ্রমিক দিয়ে মাখনা পাকা রাস্তা হতে জুম্মা বাড়ি মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত।
ওই ইউপির বাসিন্দা শ্রমিক সর্দার মোছা. রনি আক্তার সহ কল্পনা, ছালেমা, সায়মা, রুকিয়া আরো অনেকের স্বাক্ষরিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, নায়েকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিব হিরণ মিয়ার যোগসাজশে এবং প্রকল্পের সভাপতিদের সহযোগিতায় অসৎ উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে প্রকল্প দায়সারাভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং প্রকল্পগুলোতে ৪০ দিনের স্থলে ৩০ দিন কাজ করানো এবং প্রকল্পের সভাপতিগণ ৪০ দিনের কাজের বিল পিআইও অফিসে দাখিল করেছেন। প্রকল্পে ২০৪ জন শ্রমিকের জায়গায় ৭৯ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে এবং কাজ না করা বাকি ১২৫ জন শ্রমিকের মজুরি অভিযুক্তরা নিজেদের আর্থিক লাভের পায়তারা করছেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, ইতিপূর্বে দুর্নীতিমূলক কাজের জন্য দুদকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে।
মোয়াটি দক্ষিণপাড়া শেষ প্রান্ত হতে বরাটি ব্রামনদিয়া বিকচানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্প এলাকার মোয়াটি গ্রামের লাট মিয়া এ বিষয়ে জানায়, আমার বাড়ির কাছে ৮-১০ শ্রমিক ৬ মাস আগে ৪-৫ দিন কাজ করেছিলো। এর বেশী কাজ করতে দেখেননি তিনি।
অভিযোগকারী খাইরুল ইসলাম ও রনি আক্তার (শ্রমিক সর্দার) জানান, চেয়ারম্যান বর্তমান সরকারে সুনাম নষ্ট করার জন্য কাজ না করেই প্রকৃত শ্রমিকদের বাদ দিয়ে সচিব হিরণ মিয়ার যোগসাজশে নিজের আত্মীয় স্বজনদের নামে শ্রমিক তালিকা করে প্রকল্পের টাকা লুট করার জন্য পায়তারা করেছে। এর আগেও শ্রমিকদের টাকা লুটপাট করায় দূদক বরাবর অভিযোগ রয়েছে. যা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। শ্রমিকদের টাকা যেন লুটপাট করতে না পারে তাই তদন্ত করে বিল প্রদানের দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সচিব হিরণ মিয়া জানান, যারা কাজ করেছে তাদেরই মাষ্টাররোল তৈরী করা হয়েছে। কোন স্বজন-প্রীতি করা হয়নি। ১২৫ জনের মজুরির অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এতদিন তারা (অভিযোগকারী) কোথায় ছিল।
নায়েকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রোমান জানান, রাজনীতির সাথে জড়িত তাই যড়ষন্ত্র করে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কোন অনিয়ম হয়নি তদন্ত করলে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল জানান, অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করতে আজ (মঙ্গলবার) সরজমিনে দেখতে যাচ্ছি। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা তিনি জানান।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত (ইউএনও) মো. ওয়ালীউল হাসান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পিআইওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।