সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় কেন্দুয়া উপজেলায় জুয়ার আধিপত্য ভাঙ্গতে পুলিশ মাঠে নামলেও উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই উঠেছে অভিযোগ।
জুয়াড়িদের প্রসিদ্ধ স্থান কেন্দুয়ায় এ পর্যন্ত জুয়া বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নিতে পারলেও বর্তমান পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে সারা জেলায় শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান।
এরই ধারাবাহিকতায় অভিযানের অংশ হিসেবে গত ৪ মে কেন্দুয়ায় নগদ টাকাসহ পৌর কাউন্সিলর ও মেম্বারসহ নয় জন, মদনে ছয় জন জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ। পরদিন পাঁচ মে দুই উপজেলার মোট ১৫ জনকে আদালতে সোপর্দ করলে জামিনে বেরিয়ে যান অনেকেই।
এদের মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলার পেশাদার জুয়াড়িদের একজন যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তাফার পক্ষে স্ত্রী রত্না আক্তার পরবর্তীতে ৮ মে তার স্বামীকে মারধরের অভিযোগ এনে পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
এদিকে কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, দেশজুরে করোনা সংঙ্কটে মাদক জুয়া মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে শুধু আমি একা নই নেত্রকোনা জেলা পুলিশ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবেই গত চার তারিখে এনামুলের কাঠের দুতলা বাসা থেকে কুখ্যাত নয় জুয়াড়িকে আটক কারার সময় আরো একজন লাফিয়ে পালিয়ে গেছে।
এতে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূইয়ার ছোট ভাইসহ পৌর কাউন্সিলর দুইজন, মেম্বার সহ মোট নয়জনকে হাতে পেয়ে পরেরদিন কোর্টে সোপর্দ করি। কিন্তু পেশাদার জুয়াড়ির এক নম্বর আসামি গোলাম মোস্তাফার স্ত্রী ঘটনার চারদিন পর আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন মারধর করেছি।
এর কারণ হচ্ছে গত কয়েক মাস পূর্বে উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের সামনে মোফাজ্জল হোসেন ভূঞার চেম্বারের পেছনে একটি ঘরে নিয়মিত জুয়া খেলা চলে আসছিল। সেখান থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫ জনকে আটক করে। ভাইস চেয়ারম্যান তাদেরকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছিলেন। কথামত জুয়াড়িদের ছেড়ে না দেওয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে নিজে এবং বিভিন্ন লোকজন দিয়ে এসব করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা সাংবাদিকদের জানান, ওসির বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করার পর থেকেই তিনি আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে নাজেহাল করছেন।
এদিকে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোস্তাফিজউর রহমান বিপুল বলেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রিসহ জুয়া খেলায় অংশ নিয়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলা যুবলীগ বরাবর চিঠি দিয়ে জানানোও হয়েছে।
কেন্দুয়ার প্রবীণ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জুয়াড়িরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সাজিয়ে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও দলের পক্ষ থেকে এসব জুয়াড়িদের কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই। সেই সাথে জুয়া নির্মুলে পুলিশকে আরো কঠোর ভূমিকা নিতে আহ্বান করছি। জুয়াড়ি যেই হোক না কেন সে সমাজের জন্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ব্যাধি। আর তাই এই ব্যাধি থেকে সমাজকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দ্বায়িত্ব।