স্টাফ রিপোর্টারঃ গত ৭ জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর মহাপরিদর্শকের দপ্তর হতে কলকারখানাসমূহের শ্রমিক ছাটাই সংক্রান্ত এক চিঠিতে জানানো হয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সার্বিক দিক বিবেচনায় শ্রমিক ছাটাই এবং কারখানা লে অফ না করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে অমান্য করে ভালুকা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ভালুকা মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ০৭ জুন ২০২০ তারিখে কটন গ্রুপ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নোটিশ প্রদান করা হয়। যে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১০ জুন ২০২০ তারিখে শ্রমিকদের মূল মজুরির অর্ধেক প্রদান করা হবে। তাতে আবার কোম্পানি প্রদত্ত শ্রমিকদের আইডি কার্ড ও চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের ময়মনসিংহ জেলা সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবত
ময়মনসিংহের ভালুকায় আমতলীতে অবস্থিত কটন গ্রুপ- ফ্যাক্টরি অন্যায় ও বে- আইনিভাবে শ্রমিকদের মজুরি কর্তন ও চাকুরিচ্যুতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন নিয়মের তোয়াক্কা না করে তারা শ্রমিকদের কারখানায় যেসব শ্রমিকদের চাকুরীর বয়স তুলনামূলকভাবে বেশি তাদেরকে বেছে-বেছে জোর করে বলপ্রয়োগে রিজাইন লেটারে সই আদায় করে কারখানা থেকে বের করে দিচ্ছে। এ ধরনের চাকরিচ্যুতিতে শ্রমিকদের কোন প্রকার আইনি প্রাপ্য পরিশোধ করা হয় না। অন্যদিকে কর্মরত শ্রমিকদের উপর তীব্র শ্রম শোষণ সহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ধারাবাহিকভাবে করে আসছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। করোনা দুর্যোগে দেশে সাধারণ ছুটি বাস্তবায়নের সময়ও কারখানা কখনো বন্ধ রাখেনি কটন গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। মূলত স্বাস্থ্যবিধি পালন না করে স্বাস্থ্যবিধির অজুহাত দেখিয়ে অনেক শ্রমিককে কারখানা ডিউটি থেকে বাইরে রাখা হয়। শ্রমিকদের মজুরি কর্তন করে বাইরে থাকা শ্রমিকদের মোট মজুরির ৬৫ শতাংশ দেয়ার কথা সরকার ও গার্মেন্টস মালিকরা বললেও কটন গ্রুপ ফ্যাক্টরীতে তাও বাস্তবায়ন করছে না। উপরন্তু ফ্যাক্টরির ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাইরে থাকা শ্রমিকদের চাকরি নাই বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় শ্রমিকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ০৪ জুন ২০২০ তারিখে কারখানার সামনে অবস্থান গ্রহণ করে। এ প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ উক্ত তারিখে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস যথাযথ নিয়মে ০৭ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ তারিখে প্রদান করবে বলে জানায়। নির্ধারিত তারিখে শ্রমিকরা যথাযথ নিয়মে বকেয়াসহ মজুরি ও বোনাস আনতে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা করে। এরপরই ভালুকার উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ভালুকা মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে এ নোটিশ প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ এর উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ এর সাথে কথা হলে তিনি দায়সারাভাবে কথার উত্তর দেন। তিনি বলেন, কটন গ্রুপ এ ধরনের নির্দেশনা দিতে পারে না। তবে শ্রমিকরা যাক তারা রিজাইন লেটার না দিয়ে বেতন নিক। তারপরে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শ্রমিকদের চাকুরী কি পরবর্তীতে পুনরুদ্ধার করে দিতে পারবেন কি এমন প্রশ্ন করায় তিনি এড়িয়ে যান। এরপর তিনি বলেন, কটন গ্রুপ এবং শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি নোটিশ পাঠাবেন এবং সেখানে লেবার ইন্সপেক্টর থাকবে।
আজ ১০ জুন,২০২০ ইং তারিখে কটন গ্রুপ পাঁচ শতাধিক শ্রমিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক রিজাইন লেটারে সাইন করিয়ে নিয়েছে। কটন গ্রুপ কর্তৃপক্ষ আবারো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহ এর ডিআইজি এর নোটিশকে অমান্য করে এবং ডিআইজির দায়সারাভাব শ্রমিকদের জীবন এবং চাকুরীর নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ফেলেছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর ডিআইজি রাজীব চন্দ্র ঘোষ আজ কটন কারখানায় লেবার ইন্সপেক্টর ঠিকই পাঠিয়েছেন তবে তা শেষ পর্যায়ে। যখন প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সই নেয়া হয়ে গেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কটন গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। তাই শেষ পর্যন্ত দেশের এই দূর্যোগে কটন গ্রুপ সরকারী নির্দেশনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে উক্ত বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। যার কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
দীর্ঘদিন যাবত শ্রমিকদের সাথে অন্যায় অনিয়ম করলেও কোন রহস্যের কারণে কটন গ্রুপের বিরুদ্ধে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহ এর ডি আইজি কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এমন প্রশ্নই এখন শ্রমিক নেতা এবং সাধারণ শ্রমিকদের।