‘পাগল’ শব্দের উৎপত্তি খুঁজে দেখলাম। পেলাম না। গুগুল বেডারে জিজ্ঞেস করলাম – সে শুধু শব্দের অর্থ বলে, প্রতিশব্দ বলে; ইংরেজি শব্দ বলে। কিন্তু শব্দটটা কোত্থেকে এলো, কিভাবে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করলো; সে সম্পর্কে কিছু বলে না। সংসদ বাংলা অভিধানে খু্ঁজলাম -সেখানেও নেই। ‘পাগল’ শব্দের উৎপত্তি ; কারো জানা থাকলে অনুগ্রহ করে লিখবেন।
খাঁটি উন্মাদ কে?
কে সেই আসল পাগল?
সুস্থই বা কে?
গড়পড়তা নির্ণয় করে ‘সুস্থতা’র লক্ষণ বানানো যায় কি?
ধন-মান-যশের পাগল সর্বকালে সর্বদেশে ছিল, আছে।
‘আসল পাগল’ (অথেন্টিক ম্যাডম্যান)?
ঈশ্বর বা সত্য দর্শনের জন্য ‘আসল পাগলামি’?
যদি বলি ‘অ-স্বাভাবিক’। তা’হলে প্রশ্ন আসে- ‘কাকে বলে স্বাভাবিক বা নর্মাল?
‘নর্ম’ বা আদর্শ, মানদন্ডসম্মত, ঠিকঠাক যে রকম হওয়া উচিত- এটা যদি স্বাভাবিক, সুস্থ, প্রকৃতিস্থ হয়; তা’হলে ‘পাগল’ মানে আচরণে ও মনের দিক দিয়ে ‘অস্বাভাবিক’ একথা বললে কিছু স্পষ্ট হয় না।
শরীর থাকলে রোগ আসবে -এটাই তো স্বাভাবিক। শারীরিক রুগীকে তো কেউ অপ্রকৃতিস্থ বলে না। কিন্তু যে মানসিক রোগকে ‘পাগলামি’র পর্যায়ে ফেলা হয়, সে রোগগ্রস্ত কে অপ্রকৃতিস্থ বলে। আবেগের বাড়াবাড়ি হলে সবাই বলে- ‘প্রেমে পাগল’ মোনাফালোভী ব্যবসায়ী ‘লোভে পাগল’।
মাঝে মাঝে উন্মাদ আচরণ করাকে তো চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত অর্থে ‘পাগল হওয়া’ বলে না। যা স্থায়ীভাবে অপ্রকৃতিস্থ, অস্বাভাবিক তাকে বলে ‘পাগল’। সমস্যাটা এখানেই।
যদি পাগলামিই পাগলের স্বভাব হয় তা’হলে ‘পাগল’কে ‘অ-স্বাভাবিক’ বলা যাবে কি করে?
আজ তো চারদিকে দেখি সুস্থ মানুষরা অসুস্থ মানুষকে কোয়ারেন্টিন, অাইসোলেশন এর নামে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা করে রেখে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় জঙ্গলে ফেলে দিচ্ছে। প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চিকিৎসা এবং মরে গেলে সৎকার করছে।
যারা গৃহবাসী তারাও আতঙ্করোগ, শুচিবায়ু, বারবার একই কথা বলা, একই ভাবনার গোলকধাঁধাঁয় ঘুরতে থাকা, যে কোন রকমের বাতিক বা বাড়াবাড়ি – এসব কি বিচিত্র প্রকার মনোবিকার? যা নিজের অজ্ঞাতসারে অবরুদ্ধ ইচ্ছা থেকে জন্মায়?
অনেক খুঁজাখুঁজি করে এ বিষয়ে কবি জয় গোস্বামীর একটি লেখা পেলাম – তিনি লিখেছেন ” বিনয় মজুমদারের অনেক কবিতা পড়লেই আমাদের মনে হয় -এরকম পাগল আসলে সেই দুর্লভ গুণের অধিকারী যার নাম সৎ-স্বচ্ছ-স্পষ্ট চিন্তা, আর আমরা বাকিরা যারা সমাজ, রীতিনীতি, ঠিক-ভুলের ধারণা গড়ে, ক্ষমতার নিচু থেকে উঁচু সোপানশ্রেণি বেয়ে হাড্ডহাড্ডি লড়াই করে উঠছি, তারাই সকলে বদ্ধ পাগল!”
লেখক নারায়ণ সরকার
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।