স্টাফ রিপোর্টারঃ ২৬ শে মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর আসলেই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিচারন হয়। তাদের শহীদ হওয়ার গল্প, রনাঁঙ্গনে তাদের বীরত্ব,দেশ শত্রু মুক্ত করতে তাদের জীবনদানের ইতিহাস বলতে বলতে অনেকের চোখের জল বেরিয়ে অাসে। মুখে ফেনা তুলে ফেলে।
অথচ সেই বীর শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতি ফলকগুলো কেমন অাছে,কিভাবে অাছে তার খোঁজ কেউ রাখেন বলে মনে হয়না। অাজকে যারা চেয়ারে বসে স্বাধীন দেশের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন,তারা জানেননা এই শহীদদের আত্মত্যাগের জন্যই তারা অাজ চেয়ারে বড় পদে অাসীন হয়েছেন। নতুবা তারা হানাদার পাক বাহিনীর কেরানী নতুবা ছোটখাটো অামলা হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন।
অামাদের গ্রাম গ্রামান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অাছে শতশত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি ফলক। অনেক ফলক অযত্নে অবহেলায় ধ্বংস হবার পথে। অামাদের নতুন প্রজন্ম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস জানেননা। না জানার কারনও অাছে। তাদের স্মৃতি ফলক গুলো সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে যাচ্ছে। যেটা স্বাধীনতা বিরোধীরা মনে প্রানে সব সময় প্রত্যাশা করে থাকেন।
অাজ গ্রাম গ্রামান্তরের স্মৃতি ফলকগুলোর কথা বাদই দিলাম। নগরের প্রান কেন্দ্র কোতোয়ালী থানা সংলগ্ন জেলা পরিষদের ডাকবাংলার ভিতর দক্ষিণ দিকে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলক দেখলে অবহেলা অার অযত্নের যে চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠবে তা কল্পনা করাও দুঃসহ বেদনার কারন হবে।
১৯৭১ সনে ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলা ও বর্তমানে ছোটবাজারের ইসলামী ব্যাংক ছিল স্বাধীনতা বিরোধী অালবদর,রাজাকার ও অালশামসরা এদুটো স্থানে মুক্তিযুদ্ধা, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তিদের ধরে এনে চরম নির্যাতন করে কয়েকদিন না খাইয়ে রেখে নৃশংস ভাবে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখতো। অার বর্তমান ইসলামী ব্যাংকের জায়গায় একটি কুঁয়া ছিল, সেখানে লাশগুলো ফেলে দিতো।
স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এতই বুদ্ধিমান ছিল, ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর স্বাধীনতা বিরোধীরা ছোটবাজারের জায়গাটি কিনে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক নির্মান করে সেই কুঁয়াটি মাটি চাপা দিয়ে বিশাল বিল্ডিং নির্মান করে সেই গনকবরের ইতিহাস ধামাচাপা দেয়। অাজ প্রায় ৪০ বৎসর যাবৎ ছোটবাজারে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনব্যাপী মুক্তমঞ্চ স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করা হয়। এখানে সরকারের মন্ত্রী,উচ্চ পদস্থ অামলা, জেলার বড়বড় নেতারা গলা ফাটিয়ে বক্তব্য রাখেন। মৃত্যুর অাগে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ অাশরাফ এই মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন এখান থেকে ইসলামী ব্যাংক সরিয়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূনঃস্থাপন করবেন। দূর্ভাগ্য অামাদের সৈয়দ অাশরাফ এর কিছুদিন পরে মারা গেলে ইসলামী ব্যাংক এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ ভেস্তে যায়। অাজো গনকবেরর উপর দাপটের সাথে ইসলামী ব্যাংক চলছে। বর্তমান সরকার একটানা প্রায় ১২বৎসর ক্ষমতায় থাকলেও ইসলামী ব্যাংকটি এখান থেকে উচ্ছেদ করতে পারেননি। ইসলামী ব্যাংকের নীচে চাপা পড়ে অাছে স্বাধীনতার মূল্যবান ইতিহাস। যা কোনদিনই নতুন প্রজন্ম জানবে না।
ঠিক তেমনি থানার অপরদিকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলার ভিতর একটা স্মৃতি ফলক অাছে। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ঘটা করে ওখানে ফুল দেয়া ছাড়া সারা বছর অার কোন খোঁজ নেই সেই শহীদদের। গত দুদিন অাগে সেই গনকবরের স্মৃতি ফলকে গিয়ে দেখা যায়, অাগাছায় পরিপূর্ণ শহীদ বেদীটি বিলিন হবার পথে। অার ৬ মাস এক বছর পর এখানে যে শহীদ বীর যোদ্ধারা অযত্নে অবহেলায় ঘুমিয়ে অাছে, তার চিহ্নটুকু খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।
এই স্মৃতি ফলক দেখার দায়িত্ব কার। তবে যার দায়িত্বই থাকুক না কেন,তার গাফিলতি অমার্জনীয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। অামাদের গৌরবজ্বল ইতিহাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে বলা হলেও বাস্তবে তাদের স্মৃতি ফলকগুলোর করুন অবস্থা দেখে অাগামী প্রজন্ম অামাদের ক্ষমা করবে না।
প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষ আবেদন জানিয়ে বলেন, অাপনারা অতিদ্রুত ডাকবাংলার স্মৃতি ফলকের নিশ্চিন্ন হয়ে যাওয়া করুন অবস্থা থেকে এটিকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিন। নতুবা অাগামী প্রজন্ম অামাদের ক্ষমা করবে না।