সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা): গৃহকর্মী মারুফা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছে পুরো নেত্রকোনা জেলা। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে এ আন্দোলন। শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
মারুফা হত্যার প্রতিবাদে জেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মে) বেলা ১১টার দিকে মোহনগঞ্জের শিবির বাজারে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার দুই শতাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে মারুফা হত্যার প্রতিবাদ জানায়। এ সময় অভিযুক্ত কাঞ্চন চেয়ারম্যানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রাজ গোস্বামী ও তা সহপাঠীদের আয়োজনে ডাকা এ মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম খোকন, আইনজীবী রাসেল, সাবেক ছাত্র নেতাছাত্র নেতা বিপ্লব মোহন সরকার সুসেন, সিংধা ইউপি’র সাবেক সদস্য সন্ধ্যা রানী রায়, শাহ আলম প্রমুখ বক্তৃতা দেন।
তারা জানায়, মারুফা হত্যাকাণ্ডটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। জনতা সোচ্ছার হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও দেখে বুঝা যাচ্ছে এটি নিরিহ একটি ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিবাদকারীরা হুঁশিয়িারি উচ্চারণ করে বলেন, মারুফা হত্যার বিষয় নিয়ে যদি জজমিয়া নাটক সাজানো হয়। জনগণ তা মেনে নিবে না, আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে।
এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদেক আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে চলমান এ আন্দোলনকে বেগবান করতে ছাত্রলীগ পাশে থাকবে বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সব সময় অন্যায়কে রুখে দিয়েছে, কখনো আপোষ করেনি। মারুফার ঘটনায়ও ন্যায় বিচারের পক্ষে মাঠে থাকবে ছাত্রলীগ।
মারুফা হত্যা মামলার প্রধান আসামি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চন গ্রেফতারের এক দিন পরই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। এতে করে এলাকবাসীর মাঝে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে একধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই পুরো উপজেলায় মারুফা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সকল মানুষ একাট্টা হয়ে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে।
এ আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ঈদের দিন সন্ধ্যায় প্রজ্জলিত মোমবাতি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। এর আগে চেয়ারম্যানের নিজ এলাকা পৌরশহরের দৌলতপুরে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুত্তলিকা দাহ করে আন্দোলনকারীরা।
কিন্ত গত ৯ মে কাঞ্চন চেয়ারম্যানের মোহনগঞ্জের বাসার পেছনে বড়ই গাছে ঝুলে গৃহকর্মী কিশোরী মারুফা আত্মহত্যা করেছে বলে লাশ নিয়ে নিজেই হাসপাতালে যান। পরে শিশুটির গায়ে স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখে হাসপাতালের ও স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ হলে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ মারুফার বাবার বাড়ি সিংধা এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে হওয়ায় ভয়ে শিশুটির মরদেহ কলমাকান্দায় তার নানার বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মারুফার মাকে ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যার মামলা করতে চাপ দেয় চেয়ারম্যান। পরে মেয়ের মা আকলিমা আক্তার ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর হস্তক্ষেপে ঘটনাস্থল মোহনগঞ্জ থানায় ১১ মে মামলা নেয়। ওই রাতেই পুলিশ চেয়ারম্যানকে আটক করে ১২ মে আদালতে পাঠালে ১৪ মে জামিনে ছাড়া পান চেয়ারম্যান কাঞ্চন।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, মারুফা হত্যা মামলাটি এখন আর মোহনগঞ্জ থানায় নেই। এ মামলাটি তদন্তের জন্য গত ২৩ মে সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।