সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : ঈদের সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে গৃহকর্মী মারুফা হত্যার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে এ আন্দোলনে একাত্মতা জানায় অংসখ্য মানুষ।
ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় পৌরশহরের শিয়ালজানি ব্রিজের ওপরে হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দাড়িয়ে থেকে এ প্রতিবাদ জানায়। মানবিক মোহনগঞ্জের আয়োজনে করা এ প্রতিবাদে শিশু ছায়া মোহনগঞ্জ টিম ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাঞ্চন চেয়ারম্যানের নিজ বাসার সামনেসহ কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও নেত্রকোনা পৌরশহরে অসংখ্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে এবং তরুণ সমাজ বিচারের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে জেলাজুড়ে। ক্রমে এ আন্দোলন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে।
এতে বক্তারা বলেন, গৃহকর্মী মারুফা হত্যার বিষয়টি সমাজের সবার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে, কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। মানুষ মারুফা হত্যাকারীকে আইনের কাঠগড়ায় দেখতে চায়।
তারা আরো বলেন, এই মোমবাতির আলো নিভে যাবে কিন্তুু মারুফা হত্যার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন থামবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায় বিচার না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত চেতনার অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে যাব। এ সময় তারা হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানবিক মোহনগঞ্জের সভাপতি ও ভাটিবাংলার জনপ্রিয় কবি রইস মনরম, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম খোকন, শিশু ছায়ার মো. রফিকুল ইসলাম, রানা হামিদ, ছাত্রনেতা ইলিয়াছ হোসাইন, সন্ধারানী রায় প্রমুখ।
এর আগে গত ৯ মে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের বাসার কিশোরী গৃহকর্মী মারুফা (১৪) আত্মহত্যা করেছে বলে লাশ নিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই হাসপাতালে যান। পরে শিশুটির গায়ে স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে যখমের চিহ্ন দেখে হাসপাতালের এবং স্থানীয় মানুষদের মাঝে সন্দেহ হলে থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্তের পর লাশ মারুফার বাবার বাড়ি সিংধা এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে হওয়ায় ভয়ে কলমাকান্দা নানার বাড়িতে নিয়ে দাফন করে।
চেয়ারম্যান বিভিন্নভাবে মারুফার মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আত্মহত্যা মামলায় সই করাতে চায়। পরে মেয়ের মা আকলিমা আক্তার ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর হস্তক্ষেপে ঘটনাস্থল মোহনগঞ্জ থানায় ১১ মে মামলা নেয়। ওই রাতেই পুলিশ চেয়ারম্যানকে আটক করে ১২ মে আদালতে প্রেরণ করলে ১৪ মে চেয়ারম্যান জামিনে ছাড়া পায় চেয়ারম্যান কাঞ্চন।
এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও তরুণেরা হত্যার প্রতিবাদে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।