বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবেলা ও দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করার জন্য উপকূলীয় ৮টি কমিউনিটি রেডিও ও দু’টি অনলাইন রেডিও গত ১৭ মে (রোববার) থেকে বিরতিহীনভাবে ১৬০ ঘন্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেডিওগুলোর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএসএ), ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিশেষ বুলেটিন প্রচার, স্পট, জিঙ্গেল, নাটিকা, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাতকার ইত্যাদি। এ সমস্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় কবলিত জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে নানাবিধ তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে যেমন- ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থান , আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মূল্যবান সামগ্রীসহ শুকনা খাবার ও ঔষধ কাছে রাখা, শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতীদের নিরাপদে দ্রুততার সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ, গবাদি পশু রক্ষা, স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রদত্ত ত্রাণ ও সেবা তৎপরতা, ঘূর্ণিঝড় মোবাবেলা সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুমের নম্বরসহ ও ফোন করার পদ্ধতি, পানিতে ডুবে থাকা বা বিছিন্ন বিদ্যুৎ লাইন সম্পর্কে সতর্ক বার্তা ইত্যাদি ।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত উপকূলীয় রেডিও স্টেশনগুলো ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, দুর্বল ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক, ঝড়ো হাওয়ার কারণে এন্টেনা দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্থানীয় যোগাযোগ সমস্যা, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
রেডিও স্টেশনগুলোর ২জন সার্বক্ষণিকসহ মোট ৫৭ জন সম্প্রচারকারী ও ২৯৮ জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি আদেশ (এসওডি) অনুযায়ী নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তর, সম্প্রচারভুক্ত এলাকার সকল উপজেলার কন্ট্রোল রুম, পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম, জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুম, ইউনিয়নসমূহের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, স্কাউট, দুর্যোগ মোকাবেলা নিয়ে গঠিত কমিটি ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। রেডিওসমূহ তাদের নির্ধারিত অধিবেশনের বাইরে এসব সতর্কীকরণ বার্তা ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত রেডিও স্টেশনগুলো হলো- কমিউনিটি রেডিও লোকবেতার ৯৯.২ এফএম (বরগুনা), কমিউনিটি রেডিও নলতা ৯৯.২ এফএম (সাতক্ষীরা), কমিউনিটি রেডিও কৃষি ৯৮.৮ এফএম (বরগুনা), কমিউনিটি রেডিও সাগরগিরি ৯৯.২ এফএম (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম), অনলাইন রেডিও দ্বীপ (সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম), কমিউনিটি রেডিও নাফ ৯৯.২ এফএম (টেকনাফ, কক্সবাজার), কমিউনিটি রেডিও মেঘনা ৯৯.০এফএম (ভোলা), কমিউনিটি রেডিও সাগরদ্বীপ ৯৯.২ এফএম (হাতিয়া, নোয়াখালী) অনলাইন রেডিও ভৈরব (বাগেরহাট)।
বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর একটি মনিটরিং সেল মার্ক মানস সাহার নেতৃত্বে ০১৭১২ ১৪৪১৮০) কাজ করছে। এই সেল ২৪ ঘন্টা ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মনিটরিং করছে। চলমান ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় কমিউনিটি রেডিওগুলোকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন, জনগণের জীবন এবং সম্পদ রক্ষার্থে কখন কিভাবে কোন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে তার গাইডলাইন, ম্যাটেরিয়াল সরবরাহসহ রেডিও স্টেশনের প্রস্তি ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান এবং রেডিওগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে এর পূর্বে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, রোয়ানো, কোমেন, ফনি ও বুলবুল মোকবেলায় বাংলাদেশের কমিউনিটি রেডিওগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় বাংলাদেশের কমউিনিটি রেডিওগুলো হয়ে উঠে উপকূলীয় জনগণের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও আগাম তথ্য প্রাপ্তির প্রধান উৎস।