সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : গৃহকর্মী মারুফা হত্যার বিচারের দাবিতে এবার রাস্তায় নেমেছে পাইলটিয়ানরা। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
নোত্রকোনার বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের বাসায় তার গৃহকর্মী মারুফা আক্তার (১৪) হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্ছার হয়েছে পুরো জেলা। গত ৯ মে মারুফা হত্যার পর থেকেই এর বিচারের দাবিতে আওয়াজ উঠতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে। এ আওয়াজ ক্রমশ জোড়ালো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন, নারী নেত্রী এবং শিক্ষার্থীও রাস্তায় নেমে এসছে মারুফা হত্যার বিচার দাবিতে। দেশ বরেণ্য জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণও এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৯ মে) বেলা ১১টার দিকে পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে মারুফা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে। এ সময় তার বিভিন্ন স্লোগান সমন্বিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। এ সময় মারুফার মা আকলিমা আক্তারও কলমাকান্দা থেকে এসে এ মানববন্ধনে যোগ দিয়ে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে বক্তব্য দেন।
পাইলটিয়ানরা বলেন, ছবিতে আঘাতের চিহ্ন এবং মারুফার মায়ের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় মারুফাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায় তারা। সেইসাথে মারুফা হত্যাকাণ্ডকে যারা আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল এবং এ ঘটনার পেছনে মদদদাতাদেরকেও শাস্তি দেওয়ার দাবি তাদের।
তারা আরো বলেন, মারুফা আমাদের বোন। সঠিক বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে। কারণ অপরাধী অপরাধীই তার কোন পরিচয় নাই। মারুফা হত্যার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় তারা।
মানববন্ধনে পাইলটিয়ান ২০০৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌসিফ, ২০০১৫ ব্যাচের টিপু, ২০০১৯ ব্যাচের নাঈম, ২০১৪ ব্যাচের শাওন ও ২০১৬ ব্যাচের আরিফসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়।
গত ৯ মে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের বাসায় গৃহকর্মী কিশোরী মারুফার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বিকালে শিশুটির লাশ নিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১১ মে মারুফার মা আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানকে আসামি করে থানায় মামলা করে। ওইদিনই রাতে মোহনগঞ্জ থানার পুলিশ চেয়ারম্যানকে আটক করে। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে জেলে রাখার একদিন পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হন চেয়ারম্যান কাঞ্চন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝর উঠে। পরে শিশুটির শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে সঠিক বিচার দাবি করেন জেলাবাসী। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় চেয়ারম্যানের ফাঁসি চেয়ে মানববন্ধন হচ্ছে।