সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : কিশোরী গৃহকর্মী মারুফা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এবার কাঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মোহনগঞ্জ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। এ সময় অভিযুক্ত কাঞ্চন চেয়ারম্যানকে ধর্ষক ও হত্যাকারী বলে উল্লেখ করা হয়।
রবিবার (১৭ মে) দুপুরে বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিওজেএ) এর মোহনগঞ্জ শাখার অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাইলী আরজুমান বলেন, গৃহকর্মী মারুফার বিষয়টি নিশ্চিত একটি হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ। মারুফার শরীরে এসবের আলামত রয়েছে। মেয়ের মা টিভিতে সাক্ষাতকারে বলেছে, আমাকেও বলেছে ‘আমি আমার মেয়ের পুরো শরীরটা দেখেছি, কি কি হয়েছে আমি জানি।’ এর পরে কি আর কিছু বোঝার বাকি আছে। কাঞ্চন চেয়ারম্যানকে একজন ধর্ষক-হত্যাকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরণের দানবকে আমরা ঘৃণা করি, ধিক্কার জানাই।
তিনি আরো বলেন, কাঞ্চন চেয়ারম্যানের এসমস্ত কাজকর্ম আজ নতুন নয়। বিগ দিনেও এই কাঞ্চন চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের একজন নারী সদস্যকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেছিল। সেই নারী আমাদের কাছে এসেছিল, বিচার চেয়েছিল। আমরা সেদিন কোন এ্যাকশন না নিয়ে ওই নারীকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন আমরা ভুল করেছিলাম। সেদিন যদি এই চেয়ারম্যানের মুখোশটা উন্মোচন করতে পারতাম, তাহলে তার মতো একটা দানব মারুফার মতো ১৪ বছরের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করতে পারতো না। এই দানবকে এখনি রুখতে হবে।
অতীতে অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও সবকটির বিচার হয়নি জানিয়ে এই নারী নেত্রী বলেন, ‘আমরা দেখছি যখন কোন গরীব মেয়ে ধর্ষিত হয় প্রভাবশালীদের চাপে সেটা ধামাচাপা পড়ে যায়। কাঞ্চন চেয়ারম্যানের মতো এমন একজন জঘন্য মানুষ যদি প্রভাব খাটিয়ে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে বিচারের প্রতি মানুষের অনীহা তৈরি হবে। এক সময় মানুষ আইন হাতে তুলে নেবে। ফারুফার ঘটনায় ন্যায় বিচারের দাবিতে সমাজের সবাইকে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় মোহনগঞ্জ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি তাহমিনা ছাত্তার, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম খোকন, কোষাধ্যক্ষ শামীমা আজাদ কলি, নারী প্রতি সংঘের ম্যানেজার মুক্তি মহানায়েক, কবি রইস মনরম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের বাসায় গৃহকর্মী কিশোরী মারুফার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বিকালে শিশুটির লাশ নিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১১ মে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মারুফার মা আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানকে আসামি করে থানায় মামলা নেয়।
ওইদিনই রাতে মোহনগঞ্জ থানার পুলিশ চেয়ারম্যানকে আটক করে। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে জেলে রাখার একদিন পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হন চেয়ারম্যান কাঞ্চন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝর উঠে। পরে শিশুটির শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে সঠিক বিচার দাবি করেন জেলাবাসী। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় চেয়ারম্যানের ফাঁসি চেয়ে মানববন্ধন হচ্ছে।