রবীন্দ্র নাথ পালঃ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস আক্রান্তের কারনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ,খাদ্যাভাব সহ নিম্নআয়ের মানুষদের মাঝে অপরাধ প্রবনতা আগামীতে বিশাল আকার ধারন করতে পারে। চীনের উহান প্রদেশের পর করোনা ভাইরাস যেভাবে বিশ্বকে গ্রাস করে আতংকের মধ্যে ফেলেছে ,তাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সামনের দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি করোনা আতংক ও এর প্রতিষেধক বের হবার লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। প্রতিষেধক আবিস্কার যত দেরী হবে, অভাবী মানুষের সংখ্যা তত বাড়বে। আর অভাবী মানুষ বাড়লে অপরাধ বাড়বে।
১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন হবার পর জাতির জনক ৭২ এর ১০ই জানুয়ারী দেশে আসেন। সদ্য স্বাধীন নানা সমস্যায় জর্জড়িত দেশকে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসস্তুপ থেকে পূর্নগঠনে ব্যস্ত, তখন চক্রান্তকারীরা নানাভাবে সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য ট্রেন দূর্ঘটনা,পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ,ব্যাংক লুট, হত্যা,ডাকাতি করে দেশকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে সবকিছুকে সাবোটাস বলে চালিয়ে দিতে থাকে। বাসন্তিকে মাছের জাল পড়িয়ে ছবি তোলে দেশ বিদেশে তাদের এজেন্টদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধকে কটাক্ষ করার সূযোগ সৃষ্টি করে “তলাবিহীন ঝুড়ি”আখ্যায়িত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠে।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই অপশক্তি তাদের চক্রান্ত প্রাথমিকভাবে সফল করে। আজ করোনা যুদ্ধের শুরুর পর সেই অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে সমালোচনায় মেতে উঠেছে। যদিও এখন আর ৭৫ সন নেই। সেই অপশক্তি আর আগেরমত সরাসরি চক্রান্তে নামতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল্পকাহিনী আর বানোয়াট তথ্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে,এই মূহুর্তে তা কঠিনভাবে প্রতিহত না করতে পারলে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধান হতে হবে।
করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাব কমবেশী আমাদেরকে ও ভুগতে হবে। বিশ্বমন্দার এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার (১৪ই মে)বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন সময় একটি অদৃশ্য শক্তির আঘাত, যার ফলে সমগ্র বিশ্ব একেবারে থমকে গেছে। সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে আক্রান্ত।’ এমনাবস্থায় দেশের ৫০ লাখ তালিকায় থাকা রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কমর্রত শ্রমিক, পোল্ট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষকে ২৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সরকারের এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে দূর্বলভাবা ঠিক হবেনা জেনেও চক্রান্তকারীরা বসে নেই। করোনার প্রভাব কমে গেলে এবং ঈদের পর অবস্থার উন্নতি হলে দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে থাকা কিছু মানুষ চক্রান্ত কারীদেও পাতা ফাঁদে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চেষ্টা করবে। মাদক কারবারীরারাও গর্ত থেকে বেড়িয়ে এসে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা যে করবে না,তার নিশ্চয়তা কি?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন লকডাউন বাস্তবায়ন,ত্রান কাজে অংশগ্রহন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সহ সাধারন মানুষকে ঘরে থাকতে যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে মাদক কারবারিরা যে ঘরে আছে,তা নয়,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততাকে পূজি করে তারা এখন অবাধে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।