আবৃত্তিগুরু তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ আর নেই
আজ ১২ মে সকাল ১০ টায় জানাজা ও দাফন গুলকিবাড়ি কবরস্থান।
আবৃত্তিগুরু তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।জন্মেছিলেন ১৯৪১ সনের ১৪ অক্টোবর। চলে গেলেন গতকাল ১১ মে সোমবার ২০২০ সন্ধ্যা সাতটায়। পরিবারে রয়েছেন একমাত্র কন্যা সংহিতা বহ্নি এবং স্ত্রী মাহবুবা খন্দকার ।
তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ দীর্ঘদিন মস্তিষ্কের জটিলতায় ভুগছিলেন। তারপর মাইল স্ট্রোক হয় এবং হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। কিডনি সমস্যাও ছিল।প্রায় দশ বছর ধরে ডায়বেটিসে ভুগছিলেন।সম্প্রতি দ্বিতীয়বার স্ট্রোকের পর পিঠে ঘা হয় এবং তাতে ক্ষত তৈরি হয়ে পচন ধরতে শুরু করেছিলো।
এমতাবস্থায় হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাসায় মৃত্যুবরণ করলেন।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের কর্মকর্তাবৃন্দের মধ্যে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি আলী ইউসুফ এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মস্তাফিজুর বাসার ভাষানীসহ শুভাকাঙ্ক্ষী
স্বেচ্ছাসেবক এবং সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত থেকে প্রয়াত আবৃত্তিজনের দাফন-কাফনের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান আবৃত্তিগুরু তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের মৃত্যুতে প্রশাসনের পক্ষে শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াতজনের মৃত্যুজনিত সার্বিক প্রস্তুতির সাথে যুক্ত থাকায় তাঁকে নিয়ে স্ট্যাটাস লিখতে দেরি হল।এখন থেকে একঘণ্টা আগে বাসায় ফিরে লিখতে বসলাম না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই বরেণ্য গুণীজনকে নিয়ে।সত্তর-আশির দশকের দেশ কাঁপানো আবৃত্তিকার।বাংলাদেশে তিনি আবৃত্তিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এবং নবতর চিন্তা ও ধ্যান- ধারণায় সমৃদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ।
তিনি প্রথাগত আবৃত্তির ফর্মকে ভেঙ্গে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তাঁর আবৃত্তি বিষয়ক গ্রন্থ বস্তুবাদী আবৃত্তি তত্ত্ব আবৃত্তির ক্ষেত্রে বাঙলা ভাষায় রচিত মৌলিক গ্রন্থের একটি। তিনি জীবনের এক উজ্জ্বল সময় ঢাকায় কাটিয়েছেন। আবৃত্তির আলোকিত উন্মেষ ও বিকাশে ধ্যানমগ্ন হয়ে কাজ করেছেন। তৈরি হতে পথ দেখিয়েছেন দেশখ্যাত আবৃত্তি শিল্পীর অনেককেই। কবি জীবনানন্দ দাশ এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধিক পছন্দের কবি হিশেবে তাঁর আবৃত্তির ক্যানভাসজুরে রয়েছেন। তিনি একজন সাম্যবাদী মানবিক মানুষ।
পেশাগত জীবনে তিনি আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজে সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে সময়ে আশির দশকে প্রভাষক হিশেবে শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীতে মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়য়ে শিক্ষক হিশেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সংস্কৃতিজন অধ্যাপক আমীর আহাম্মদ চৌধুরীর সাথে কাজ করেন। এক সময় মস্তিষ্কের অসুখটা প্রবল হয়ে উঠলে আর চাকুরী চালিয়ে যেতে পারেন নি। তারপর এভাবেই চিকিৎসা আর গৃহস্থালি-সংসার টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ-জীবন । তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ চাকুরী জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং অধ্যাপক আমীর আহাম্মদ চৌধুরী এই দু’জনেরই পছন্দের মানুষ ছিলেন এবং তাঁদের সহযোগিতাও পেয়েছেন সেই সময়, এ কথা জানিয়েছেন তিনি নানা আলাপচারিতায় ।
তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রী দেশের কৃতি মানুষ আসাদুজ্জামান নূর ঘনিষ্ঠজন হিশেবে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছেন সে জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।তিনি সকল মানুষের কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউটে তারিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের আবৃত্তি শুনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন। তার ক’দিন বাদেই ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান টেলিভিশনে আবৃত্তি প্রোগ্রাম করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানের প্রযোজক ছিলেন প্রয়াত কবি শহীদ কাদরী।
মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে সকলকে তাঁর জন্য দোয়া করার আহবান জানাই।
স্বাধীন চৌধুরী
সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ।