অবিলম্বে হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ত্রাণ, প্রণোদনা ও রেশন কার্ড প্রদানের দাবিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন, রেজিঃ নং-২০৩৭। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি ৭ মে বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব বরাবর প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া স্মারকলিপির অনুলিপি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব ; মাননীয় মন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব, ; মাননীয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; মহাপরিদর্শক( অতিরিক্ত সচিব), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ; মহাপরিচালক ( অতিরিক্ত সচিব), শ্রম অধিদপ্তর বরাবর।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হোটেল সেক্টরের কর্মরত শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সেক্টরের শ্রমিকদের মাসিক গড় আয় আট থেকে দশ হাজার টাকার নিচে। যাদের অধিকাংশের মজুরি দৈনিক ভিত্তিতে হওয়ায় “নো ওয়ার্ক, নো পে” নিয়মে মালিকরা মজুরি প্রদান করে আসছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সমস্ত হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত মালিকরা শ্রমিকদের কোন মজুরি প্রদান করে নি। বছরের পর বছর যে শ্রমিকরা একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে আসছে দেশের সাধারণ ছুটির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদেরকে মজুরি প্রদান না করা সুস্পষ্ট শ্রম আইন লংঘন। যে শ্রমিকদের দিয়ে মালিকরা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছে, আজ দুঃসময়ে মানবিক কারণেও তারা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় নি।
করোনা দুর্গত পরিস্থিতিতে মহামারী মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত ” ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন” কর্মসূচির কারণে গত ১৩ এপ্রিল কর্মহীন হয়ে পড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকগণের আর্থিক/ খাদ্য সহায়তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭৬০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি শ্রমিকদের তালিকা সংগ্রহ সহ ব্যাংক/ মোবাইল একাউন্ট করার তাগিদ দেন। গত ১২ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে সারাদেশে ক্রাইসিস মানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির কর্ম-পরিধিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বাঁচাতে সরকারের আর্থিক সহায়তার যেনো আওতাভুক্ত হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ডাটাবেজ তৈরীর কথা বলা হয়। তার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হোটেল শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরি করে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা স্ব স্ব অঞ্চলের ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকা হস্তান্তর করা করেছে। কিন্তু জেলা বা উপজেলার দুর্যোগ মোকাবেলার সমন্বয় কমিটি তাদের তৎপরতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উল্লেখিত নির্দেশনাকে কোথাও সমন্বয় করা হচ্ছে না। ইউএনও ও জেলা প্রশাসকগণ শ্রমিকদের তালিকার প্রেক্ষিতে কোথাও কোথাও তা সিটি করপোরেশন/ পৌরসভা /চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করে দিয়েছেন আবার অনেক জায়গায় ইউএনও ও জেলা প্রশাসকগণ এসব তালিকা গ্রহণই করেননি। অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এই সময়ে নাগাল না পেয়ে শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে ছুটছে । উপরন্তু বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে স্থানীয় কাউঞ্চিলরদের পছন্দ এবং দলীয় বিবেচনায় ত্রাণ সামগ্রি প্রদানের জন্য কিছু তালিকা হচ্ছে। যেসব তালিকায় হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষদের ঠাঁই হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় কেবল মাত্র ভোটারদের ( জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে) বিবেচনা করা হচ্ছে বিদায় বাহির থেকে যেসব অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ এসে শহরের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছে তারা এর আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ফলে অসহায় হোটেল শ্রমিকরা দারিদ্রতার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করছে। কোথাও থেকে তাদের খাদ্য সামগ্রি প্রদানের নিশ্চয়তা না পেয়ে হতাশা ও গ্লানিতে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে “সংগনিরোধ” বজায় রাখতে সরকারের “ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন” কর্মসূচি বাস্তবায়ন শ্রমিকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বিপক্ষিয় কমিটি গঠণ বা শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত করে সকল শ্রমিকদের তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করে রেশন কার্ড, খাদ্য সহায়তা বা আর্থিক প্রণোদনা জরুরি ভিত্তিতে প্রদান আবশ্যক হয়ে উঠেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি