প্রায় কবিতার মতো কথন
ওকালতি ব্যস্ততার সেই কোলাহল এখন স্তব্ধ,
চেম্বার, ঢুকতেই উদ্বিগ্ন আসামি হিরণ;
গত তিন বছর একটানা হাজিরা দিতে কাহিল,দেখা হতেই, সেই প্রশ্ন ভাই আর কতো?
আপনি ইচ্ছা করলেই সেরে দিতে পারেন!
না ভাই আমি পারি না, আপনার মামলা টা কন্টেস্টিং, ইচ্ছে করলেই শেষ হবে না।সময় লাগবে।
অবিশ্বাস এর ভঙ্গিতে, ঠোঁট উল্টালেন তিনি। এসিস্ট্যান্ট
আউয়াল হাজিরা কাগজ নিয়ে আসে;
সই দেন স্যার! এই লোক তো স্যার একটা টাকাও দেয় না!
ঠোঁট উল্টানোর সাথে আউয়াল এর মৃদু বচসা।
বিড়বিড় কন্ঠে, টাকা, আর কতো?
সারেন্ডার আছে, গ্রিভিয়াস ইনজুরির অভিযুক্ত আসামি।
এক নম্বর আসামীর জামিন টা ভাই করে দিবেন,
মুখ কানের কাছে নামিয়ে নিয়ে এসে মৃদু কন্ঠে, কিন্তু দৃঢ় ভাবে বলা, যেভাবে পারেন, যদি কাউকে সাথে নিয়ে হলেও, প্লিজ! ভাই প্লিজ!
নির্লিপ্ত নারী কন্ঠ ;শিরিনার,
একদিনো হাজত খাটাতে পারলেন না, হারামি টা কে,
কি লাভ হলো, মামলা করে?
সেই দিন লুঙ্গি উঁচিয়ে, মুদি দোকানের সামনে,
হারামজাদি, তোর মামলা রে আমি কাচকলা দেখাই?
এইরকম একটা শয়তান রে তো স্যার কিছুই করতে পারলাম না!
অসহায়, নারী! , নিজের অক্ষমতা কে চাপা দিয়ে, সমস্ত,রাগ তার উপর ঢেলে দিলাম,
যে রাগ,রাসট্র,সরকার, জজ,স্ট্রাকচার,কাউকে, দেখাতে পারিনা,
সেই বিক্ষুব্ধতা দেখিয়ে দিলাম ভুক্তভোগী কে —
মামলা নিয়ে চলে যান, দেখেন কেউ পারে কি-না!
সাদা কাগজের ছাপানো হাজিরা,
নীল রংএর ওকালত নামা,
হলুদকার্টিজ,যার দাম তিন টাকা, ষাট টাকায় বিক্রি। পাঁঁচবার ডেপুটেশন এও যার দাম কমেনি।
তেল,পেয়াজ,আদার চেয়ে ভিন্ন কিছুই নেই এখানেও।
এ যেন ট্রেন থেকে দেখা সেই পুরনো দৃশ্য,লুঙ্গি দিয়ে মুখ ঢেকে,
প্রাকৃতিক কাজ সারার ভোরের রেলপথ।
স্ট্যাম্প লাগানো প্রিটিশান,টেবিলের কাচ,তলিয়ে যায় কাগজের নানা বর্ণের বাহারে।
জীবন আর ওবায়দুর, লেখে চলছে একটার পর একটা।
তার মাঝে আসে, চা, লিকার, আদা কিংবা কন্ডেন্সড মিল্ক সহযোগে, অর্ধেক কাপ চা,
চা বিক্রেতা আইয়ুব এসে জানিয়ে যায়, আরো চা লাগবে কি-না? একই সাথে গত সপ্তাহের হিসাব টাও।
বিবরণ দীর্ঘ হবে, অনেক দীর্ঘ!
এর সবই আপাতত ;স্থগিত !
শুধু
সামন্তীয় ভঙ্গি টা রয়ে গেছে নিভৃতে।
প্রতিদিন এর ইনকাম বন্ধ।
জুবেদ আলী স্যারের অমোঘ বাণী, বার বার মনে পড়ে, উকিল যখন চলে তখন লাইক এ কিং,
আর, যখন নিস্কর্ম হয়,তখন রাস্তার বগ,বগ করা প্রাণীটির মতো কী?
বেশী বলে ফেল্লাম না-কি!
টাকা, পয়সায় নেই কোন ভূস্বামী আয়োজন,
কিন্তু অতি সঙোপনে রয়ে গেছে, সামন্তীয় আচরণ।
করোনা, মহামারীর এ সময়ে চিনেছি এ আভরণ।
কাদা চষা জমিনে, মই দেয়ার পর জল ছিটকায় খলিশা, কৈ!
আইল কাটা ঠোসায় আটকে পড়া চিকড়া,গুতুম,
উইন্যায় প্যাচে পড়া শিং,ভেদুরির মতোই।
মুনাফা যখন চালায় সমাজ,
লোভও তখন প্রধান হয়েই থাকে, সেই কবে ইশতেহার এ লেখে গেছেন কার্ল মার্ক্স।।
উৎকট ধনবাদে,আইনবিদ, চিকিৎসক হয়ে যায় মজুরি দাস!আহা!
কত দরকারি, অদরকারী কাজে ব্রিটিশ র্যাডক্লিপ থেকে, দেশীআমলা পর্যন্ত কচলায়নি যে হাত, সেই হাত উত্তোলিত হয় নি কতোদিন আধিপত্য মুখিন মিথ্যাজীবিদের বিরুদ্ধে।
একটা সমাজ চলে গেলেও,
থেকে যায় সেই সমাজের কিছু চিহ্ন।
মহামারী কালে ও তাই ভাবতে হবে, ভাবতে হবে,
কেননা,
আমরা মানব সভ্যতা কে রেখে যেতে চাই,
সমতায়, মমতায়, মানবিক, অভিন্ন।
লেখক : এমদাদুল হক মিল্লাত