সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা: ‘আমি খুব গরীব মানুষ স্যার। ৮০ শতক জমিতে ধান করেছিলাম। শ্রমিক ও টাকার অভাবে ধান কাটাইতে পারছি না। দূর থেকে দেখলাম আপনারা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। আমার চেয়েতো গরীব কেউ নেই। আমার জমির ধানগুলো কেটে দিলে অনেক উপকার হতো।’
নেত্রকোনা জেলা আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও ভিডিপির কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জিয়াউল হাসানের কাছে এমন আবেদন জানান পূর্বধলার সন্ধ্যা রাণী সরকার নামে এক অসহায় নারী কৃষক। এ কথা শুনে আনসার সদস্যদের নিয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা রাণী জমির ধান কাটতে শুরু করেছেন ওই কর্মকর্তা।
আনসার সদস্যরা গত তিন দিন ধরে জেলার পূর্বধলা উপজেলায় কৃষকেদের ধান কেটে দিচ্ছেন। দুইজন গরীব কৃষকের ১১০ শতাংশ জমির ধান কাটার শেষের দিকে এসে কথাগুলো বলছিলেন কৃষক সন্ধ্যা রাণী । করোনার প্রভাবে শ্রমিক স্বল্পতায় খুব বিপাকে পড়েছেন তিনি।
জিয়াউল হাসান বলেন, সন্ধ্যা রাণীর কথাগুলো শুনে আমার খুব মায়া লাগলো। মনে হলো এক মুহূর্তে ওনাদের সবার কষ্ট যদি দূর করে দিতে পারতাম। আমি কথা দিলাম কেটে দেয়া হবে। আজ শুক্রবার ওনার জমির ধান আনসার ভিডিপির সদস্যরা কেটে দিচ্ছে। আমি ওনার সাথে কথা বললাম। উনি খুবই আনন্দিত, চোখ ছল ছল করছে। মুখে আনন্দের হাসি। আমিও খুব আনন্দ পেলাম। কোন কাজে এত আনন্দ পাওয়া যায়, তা আগে জানা ছিল না। গরীব মানুষের এ সামান্য কাজে আমরা সবাই যে আনন্দ পেলাম তা অসামান্য। এভাবে সারাজীবন মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মানবিক এ আনসার কর্মকর্তা।
করোনা ইস্যুতে শ্রমিক সঙ্কটের সুযোগে সু-সানগ্লাস পড়ে কৃষককে ধান কেটে দিয়ে সহায়তার নামে সেলফি, ফটোশুটে দেশজুড়ে সমালোচনা ঝড় বইছে। তখন এসবকে পাশ কাটিয়ে সত্যিকার অর্থেই কৃষককে সাহায্যের মানসিকতা নিয়ে প্রতিনিয়ত পুরো জেলা জুড়েই শ্রমিক সঙ্কটের শিকার, অসহায় কৃষকদের ধান কেটে যাচ্ছে আনসার সদস্যরা।