স্টাফ রিপোটারঃবেগম রওশন এরশাদ। ময়মনসিংহ সদর আসনের এমপি।
গত দুই সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী। বিভাগ উত্তর নগরের এমপি হিসেবে সদরের অভাবী,দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের প্রতি তার দায়িত্ব অন্য সবার চেয়ে অনেক বেশী। চলতি সংসদে তিনি নির্বাচিত হবার পর গত এক বছরের বেশী সময়ে খুব বড়জোর ২/৩ বার এসেছেন। জনসংখ্যার দিক থেকে সদরের এই আসনে লোক সংখ্যা যেমন বেশী,তেমনি অভাবী মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশী।
করোনা আতংক দেখা দেবার পর শহরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি অভাবী মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কর্মহীন দিনমজুরদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যেখানে ত্রান দেয়া হচ্ছে সেখানেই দরিদ্র মানুষ হুমরী খেয়ে পড়ছে। এমন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আছে যারা ত্রানের জন্য লজ্জায় লাইনে দাঁড়াতে পারছে না। হাত ও পাততে পারছে না। তাদের নীরব অসহায়ত্ব নিজ চোখে না দেখলে অনুধাবন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
বেগম রওশন এরশাদ ১৯৯৬ সনে ময়মনসিংহ সদর থেকে এমপি,২০০১ সনে গাইবান্ধা, ২০০৮ সনে রংপুর,২০১৪ সনে ময়মনসিংহ সদর ও ২০১৯ সনে আবারো সদর থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৯ সনে নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হন বেগম রওশন এরশাদ। একজন ৫ বারের এমপি তার সংসদীয় আসনের অভাবী মানুষের বিপদে এগিয়ে আসবেন না এটা কি কল্পনা করা যায়।
বেগম রওশন এরশাদ সদরের মত গুরুত্বপূর্ণ আসনের এমপি হয়ে করোনা মহামারী আতংকের সময় পাশে এসে দাঁড়াননি। এমন দূর্যোগে ফুলপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ, গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও জেলা পুলিশ এগিয়ে না আসলে সদরে অনাহার অর্ধাহারে থাকা লোকদের অবস্থা যে কি হতো, তা কল্পনা করা সত্যি দূরহ ব্যাপার হতো।
একজন বিরোধী দলীয় নেত্রী সে দেশের ছায়া প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষমতা ও কাজের ব্যাপ্তি অনেক দূর বিস্তৃত। সরকার যদি তাকে কোন ত্রান সাহায্য না ও দেয় তাহলে নিজের গাঁট থেকে ১/২/৩ হাজার দরিদ্রদের সাহায্য দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না। তার স্বামী ৯ বছর দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, ছিলেন সেনাপ্রধান। এই সদর আসনের ভোটাররা তাকে ৩ বার সংসদে পাঠিয়ে দুবার বিরোধী দলীয় নেত্রীর মর্যদায় বসিয়েছে। অথচ মহামারীর সময় তিনি এলাকায় নেই, নেই সাধারন মানুষের পাশে। যারা তাকে ভোট দিয়ে শুধু তাকে সাংসদ বানাননি। তার স্বামী এরশাদকে জেল থেকে মুক্ত করতে দুহাত ভরে ভোট দিয়ে প্রথম সাংসদ ও পরে বিরোধী দলীয় নেত্রীর আসনে বসিয়ে বিশেষ মর্যদা দিয়েছে।
৯০ এরশাদ সরকারের পতন ও ৯১ থেকে ৯৬ সন ছাড়া বাকী সময় টুকু তার ছিল জৌলুশের। কোনদিন অভাববোধ করেননি। তার পিতার ও ছিল বিশাল বিত্ত বৈভব। খান বাহাদুর উমেদ আলীর সন্তান বেগম রওশন এরশাদ। বিশাল বনেদি পরিবারের একজন হয়ে তিনি কনোনা মহামারীতে তার ক্ষমতার উৎস ভোটারদের পাশে নেই ব্যাপারটি ভাবাচ্ছে সবাইকে।
আজ দেশের এই দূর্যোগে তিনি এলাকাবাসীর পাশে নেই।তার দলীয় কর্মীরা নাকি নিজেদের অর্থে (১০ টন চাল ছাড়া।) ২ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরন করেছেন। অথচ গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ ফুলপুর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েও সদরে ৫ হাজার প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিলিয়েছেন। মেয়র টিটু ৪০/৫০ হাজার প্যাকেট
খাদ্য সামগ্রী বিলিয়েছেন। জেলা পুলিশ শুধু খাবারের প্যাকেট বিলিয়েছেন,তাই নয় রান্না করা খাবার রাতে অনাহারে থাকা মানুষদের বিলিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এমন দূর্যোগ মানুষ দেখেনি।
এসময়ে তিনি ঢাকায় বসে নাকি খবরাখবর রাখছেন– এমন সংবাদ নির্বাচিত এলাকার জনগণকে ব্যাথিত,মর্মাহত করেছে। তার দলীয় কর্মীরাও হতাশ। হয়তো বয়সের ভারে তিনি আর নির্বাচন করতে আসবেন না।
তবে বর্তমান দূর্যোগে তার এলাকাবাসীর পাশে না থাকা সাধারন মানুষদের অনেকদিন মনে থাকবে। তিনি ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন সবার সেটাই প্রার্থনা। তবে দূর্যোগ কালীন সময়ে তার এই নীরবতা সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।