রবীন্দ্র নাথ পালঃ অমানবিক পুলিশ এখন মানবিক পুলিশে পরিণত হয়েছে। পুলিশের সর্ম্পকে মানুষের ধারণাটা করোনা দূর্যোগে পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি প্রচার বিমূখ বর্তমান পুলিশ সুপার আহমারউজ্জামান ময়মনসিংহে যোগদানের পর পুলিশের প্রতি সাধারন মানুষের ধারণাটাই পাল্টে দিয়েছেন। ভারতের প্রদ্মশ্রী পদক প্রাপ্ত গায়ক ভূপেন হাজারিকার একটি গান আছে- মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। একটুও ভালবাসা কি পেতে পারে না। ময়মনসিংহ নগরে শতাধিক কোটিপতি আছে। অনেকের আছে অর্থ আর ক্ষমতার দাপট। যারা ইচ্ছা করলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই দূর্যোগে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেবার আহ্বানটুকু সামান্য সদিচ্ছায় অন্তত ৭৫/৮০ ভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব। তারপরও কি আমরা তাদের এই বিপদের সময়ে কাছে পাচ্ছি? সত্যি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যারা মাইকে বলতে থাকেন গরীবের বন্ধু, নিস্বার্থ সমাজসেবক, জনতার সেবক। কারী কারী টাকা খরচ করে নির্বাচন করে আজ তাদের মাঠে দেখা যায়না। করোনা দূর্যোগে সেই সব জনদরদী(!) নেতাদরে খুঁজে পাওয়া যায়না,এই কষ্টটাই আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
যাক, মানবিক পুলিশের কথা বলছিলাম। আজ সে কথাই আমি শোনাবো। তার আগে একটি কথা বলতে হয়, একটি সাবান ১০ জনে মিলে ত্রান দিয়ে সে ছবি যখন পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠায়, তখন আমার কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। ভাবি তারা ত্রান দিচ্ছে,না ফটোসেশন করে পত্রিকায় তাদের ছবি ছাপাতে চায়। আমার তখন মনে হয়,ভূপেন হাজারিকা এখন বেঁচে থাকলে,তার অমর গানটি তার গানের এ্যালবাম থেকে তুলে নিতেন।
বর্তমান পুলিশ সুপার মো: আহমারউজ্জামান ময়মনসিংহে যোগ দিয়েই করোনার মুখোমুখি হন। বিশ্বব্যাপী এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে সবাই একজোট হয়ে লড়ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারাবিশ্ব এমন ভয়ংকর অদৃশ্য শত্রুর মুখোমুখি কখোনো হয়নি। যুদ্ধটা যখন অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে,তখন পুলিশ সুপার মানবিক দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এলেন,সর্বশক্তি দিয়ে সাধারন মানুষকে বাঁচাতে লড়াই করতে নিজস্ব উদ্যেগে গোপনে মাঠে নামলেন।
আর একাজে তাকে সর্বোত সহায়তা দিতে এগিয়ে এলেন ওসি ডিবি শাহ কামাল হোসেন আকন্দ ও তার মোবাইল টিম। মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে রাখা, সাধ্যমত তাদের আহার যোগার করা, জেলার সাথে অন্য জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, রাতের আঁধারে অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরন করা এবং সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কাছে নিজস্ব অর্থায়নে সাধ্যমত চাল,ডাল,তেল,লবন,আলু,সাবান,পেঁয়াজ পৌঁছে দিয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে রাতারাতি মানবিক পুলিশে রূপান্তরিত করতে সবধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে উঠে এলেন অনন্য উচ্চতায়।
সাধারন মানুষ যখন করোনা ভীতিতে আতংকিত,তখন সারা জেলায় মাইকিং,লিফলেট বিতরন,মাক্স বিতরন,সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য প্রচার চালালেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরন ও পুলিশ আবাসনে জীবানুনাশক ¯েপ্র করে নিজের ঘরের যোদ্ধাদের বিপদমুক্ত করে করোনা যুদ্ধে নিয়োজিত করলেন। ২৬মার্চ করোনা আতংক দেখা দিলে ডিআইজি ব্যারিষ্টার হারুন অর রশিদ সহ তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ত্রান বিতরন শুরু করলেন। তারপর অবহেলিত বেদে সম্প্রদায়, বস্তিবাসী, এতিম, কুলি,অসহায় মানুষ,মধ্যবিত্ত, নাপিত, সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে ত্রান পৌঁছালেন। রাতে ঘুরে ঘুরে ভাসমান পথচারীদের রান্না করা খাবার বিতরন, হাসপাতালে পিপিই বিতরন, ডেকোরেটর কর্মী, হকার, হতদরিদ্র সহ প্রায় ১২শ জনকে নীরবে খাদ্য যোগালেন। তাকে ফোন দিয়ে ৭দিনের খাবার পায়নি এমন লোক খুব কমই আছে। এগুলো কাজ তিনি অত্যন্ত গোপনে করলেন,যাতে কারো মান সন্মান ুন্ন না হয়। যেই মধ্যবিত্ত শ্রেনী হাত পাতেন না,খবর পেয়ে রাতে চুপি চুপি খাবার পৌঁছালেন। আজ ময়মনসিংহ নগরে তার কার্যক্রমে স্বয়ং মেয়র ইকরামুল হক টিটু প্রশংসা করলেন। আমাদের ময়মনসিংহ বাসীর গর্ব গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদও প্রশংসা করলেন পুলিশের মানবিকতায়। এই মানবিকতা যদি বর্তমান পুলিশ সুপার তার আগামী দিনের কর্মে অব্যাহত রাখতে পারেন,তাহলে তিনি একদিন এ বাহিনীর চূড়ায় উঠবেন নিশ্চিত। হয়তো তখন আরেক ভূপেন হাজারিকা গাইবেন— পুলিশ মানুষের জন্য,মানুষ পুলিশের জন্য। মুজিব শতবর্ষের অঙ্গিকার-পুলিশ হবে জনতার। এই প্রত্যাশা আমরা একজন আহমারউজ্জানের কাছ থেকে পেতেই পারি।