দুর্যোগে, সংকটে সংস্কৃতি কর্মী
-রজত কান্তি দেবনাথ
আমাদের দেশে যে কোন দুর্যোগে, সংকটে যারা নিরলসভাবে শ্রম, মেধা ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের মধ্যে অন্যতম। অথচ সংস্কৃতিকর্মীদের অধিকাংশই সমাজে অবহেলিত। এঁরা সবসময়ই অন্যদের পাশে দাঁড়ানোর মাঝে নিজের সুখ অনুভব করেছেন। নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া সংস্কৃতিকর্মীদের অবদান করোনা মোকাবিলায় নেহাৎ কম নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও সংস্কৃতিকর্মীরা পিছিয়ে নেই। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রায় সবাই সংকট উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বিত্তবানদের সংগঠিত করার মাধ্যমে অর্থ/খাদ্য শস্য সংগ্রহ করে তা নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রকৃত অভাবগ্রস্ত মানুষের কাছে। কেউবা স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে অসচেতন মানুষদের সচেতন করছেন, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ খাদ্য সহায়তাও পৌঁছে দিচ্ছেন কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
কেউ কেউ গল্প, কবিতা, নিবন্ধ লিখে মানুষের মনোবল বৃদ্ধিসহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পথ বাতলে দিচ্ছেন।
বর্তমান যুগটি ডিজিটাল হওয়ার কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে সচেতনতামূলক ভিডিও গান/নাটিকা/কার্টুন তৈরি করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন। কেউবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন পোস্ট, ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করে এই যুদ্ধে সামিল হচ্ছেন। কারোর অবদান কম নয়।
বলে রাখা প্রয়োজন, সংস্কৃতিকর্মীরা কারো বাহবা পেতে/চাকরি বাঁচাতে/ভোটের আশায় কখনোই দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। শুধুমাত্র দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে তাঁরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সামনের সারিতে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যুদ্ধের ময়দান থেকে পিছু হটেনি। তথাপি তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়নি কোন প্রনোদনা বাজেট! তবুও লড়াইয়ে মত্ত দেশপ্রেমিক এই যোদ্ধাগণ।
সংস্কৃতিকর্মীরা অনেকের জন্য উজ্জ্বল বা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারেন। ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করে যেখানে চাল চুরির মহোৎসব চলছে সেখানে নিজের বাসায় নিজ খরচে রান্না করা খাবার অসহায়দের মাঝে বিতরণ করতেও দেখা গিয়েছে কতিপয় সংস্কৃতিকর্মীদের। তবুও হায় এঁরা অবহেলিত চিরকাল!
যেখানে পরিবারের লোকজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ করছে, সেখানে সংস্কৃতি পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে এমন মৃতদেহ সৎকারে ভূমিকা রাখার। নির্বাচনে বা রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখতে পোস্টার ছাপানোর বাজেট বরাদ্দ থাকলেও করোনা মোকাবিলায় তা খুব একটা নজরে আসেনা। এক্ষেত্রেও নিবেদিত সংস্কৃতিকর্মীর আহবান পোস্টারে ধরা পড়ে “আর ক’টা দিন ঘরে থাকুন”
এই সংস্কৃতিকর্মীদের অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে নেই। তাদের কথা কেউ ভাবে না। কেউ ভাবুক আর না ভাবুক তাঁরা কারো ডাকের অপেক্ষা না করে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের কথা একটাই মানুষ বাঁচুক, দেশ বাঁচুক। মানবতার জয় হোক। মানুষের মাঝেই তাঁরা খুঁজে ফেরেন স্বর্গীয় সুখ।
(লেখক: থিয়েটার কর্মী ও সম্পাদক-পঙক্তি)