করোনা ভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে পূর্বধলায় সংবাদকর্মীদের প্রচারাভিযান
কাঁচাবাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর আর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের জোর দাবি
সুহাদা মেহজাবিন: ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করুন’ এই স্লোগান নিয়ে গত ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) আরবান কার্যালয়ে সংবাদ কর্মীদের প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আরবানের নির্বাহী পরিচালক এবং আজকের আরবান এর প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ আরিফুজ্জামান। আরবানের আয়োজনে করোনা বিষয়ক এই প্রচারাভিযানের মিডিয়া পার্টনার আজকের আরবান।
আজকের আরবানের বার্তা সম্পাদক মোঃ জায়েজুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রাজু আহমেদ রাজ্জাক সরকার ও জগৎমনি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকি।
অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও দৈনিক ইকরা প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক মো: শফিকুজ্জামান শফিক, প্রেসক্লাবের সদস্য ও কলাম লেখক জাকির আহমদ খান কামাল, প্রেসক্লাবের সদস্য ও কালের কন্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, আজকের আরবান এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল আরশাদ, প্রেসক্লাবের সদস্য, ভোরের ডাকের উপজেলা প্রতিনিধি ও বাংলার আওয়াজের সম্পাদক ও প্রকাশক নূর উদ্দিন মন্ডল দুলাল, প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক ও পূর্বময় ডট কমের সম্পাদক ও প্রকাশক মো: শাখাওয়াত হোসেন শিমুল, প্রেসক্লাবের সদস্য শহীদুল্লাহ সংগ্রাম, ডেইলী অভজারভারের উপজেলা প্রতিনিধি ও তৃতীয় মাত্রার জেলা প্রতিনিধি মো: এমদাদুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সদস্য ও পূর্বকন্ঠ ডট কমের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি শাহ মো: মোস্তাফিজুর রহমান রাজিব, বাংলার আওয়াজ ডট কমের সহ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ খান, সাংবাদিক মুজিবুর, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম, আমাদের নতুন সময়ের উপজেলা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, সাংবাদিক শেখ সাদি মাসুম, আজকের আরবান এর উপজেলা প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান, বাংলার আওয়াজ ডট কমের প্রতিনিধি আনোয়ারুল ইসলাম মন্ডল ও দৈনিক প্রতিবাদ ডটকমের প্রকাশক ও সম্পাদক আল মুনসুর।
বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ৪র্থ ধাপে বিরাজ করছে বাংলাদেশ। যা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। পূর্বধলার জনপদকে এই মহামারি থেকে মুক্ত রাখতে প্রশাসন, সরকারি সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী ব্যাক্তি সহ অনেকেই যার যার অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে জীবনযাত্রার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা। এমন সচেতনতামূলক আচরণ আমাদের জনগোষ্ঠির জন্য যা অভ্যাসের মধ্যে নেই। এটিই আমাদের জন্য সবচেয়ে আশংকাজনক।
গত এক সপ্তাহে পূর্বধলার সংবাদকর্মীরা পাড়া-মহল্লার অধিকাংশ হাট-বাজার সরেজমিন পরিদর্শনে সর্বসাধারণের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে উদাসীনতার ভাব পরিলক্ষিত হয়।
যার প্রেক্ষিতে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আশু করণীয় বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
১. শুধুমাত্র কাঁচাবাজার সীমিত সময়ের জন্য ও ঔষধের দোকান খোলা রাখা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করার নির্দেশনা থাকলেও তা আদৌ মানা হচ্ছেনা। কাঁচা বাজার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা মাঠে স্থানান্তর আবশ্যক।
২. ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকেই এলাকায় এসে তাদের মধ্যে কোন ধরণের সতর্কতা বজায় রাখার মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। এ নিয়ে জনমনে ভয় ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। তাদের নিজ ঘরে রাখতে হবে।
৩. খাদ্য সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক ভীড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুবিধাভোগীদের বাড়ীতে খাদ্য পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গ্রাম পর্যায়ের অধিকাংশ চা’র দোকানে রাত অবধী আড্ডা ও লোক সমাগম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে। চা’র দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।
৫, গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে গুরুত্ব কম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার ও গ্রাম পুলিশদের সামাজিক দূরত্ব বজায রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
৭. স্থানীয়ভাবে লকডাউনের নামে সড়ক অবরোধের ফলে সংঘর্ষ, জন অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলায় বৃহত্তর পরিসরে প্রশাসনিক উদ্যোগে লকডাউন কার্যকর করতে হবে।
৮. গ্রামের হাট-বাজার সমূহে অহেতুক আড্ডা দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বাজার কমিটি ও ইজারাদারদের সক্রিয় করে সরকারি নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনা টহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকল নির্দেশনার বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে।
১০. সংকট পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা সহ অনেক কার্যক্রম অব্যাহত। সমন্বিত উদ্যোগে কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
১১. সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ব্যাক্তির সামাজিক মেলা-মেশার ধরণ বিষয়ে সাধারণের মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। পাড়া মহল্লায় নিয়মিত মাইকিং অব্যাহত রাখতে হবে।
১২. সাধারণ জ্বর-সর্দিতে করোনা সন্দেহে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়। সন্দেহভাজন রোগীদের টেষ্ট করার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং যেন চিকিৎসার ঘাটতি না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
১৩. সংবাদকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী ঝুকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। যা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি। সকলের জন্য দায়িত্ব পালনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে হবে।
১৪. দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ সহ সরকারি সকল সুযোগ- সুবিধা যারা পাচ্ছেন প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সাইট সমূহ থেকে তাদের তালিকা প্রকাশ।
১৫. করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সরকার নির্দেশিত যত কার্যক্রম আছে সেগুলো যথাসময়ে সর্বসাধারণকে জানানোর উদ্যোগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন প্রতিদিন ৫টি মাইক অটো দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম মহল্লায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থবিধি বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে সহায়তার ঘোষনা দেন। প্রচারাভিযানের পক্ষ থেকে প্রচারনা টীমের নেতৃত্বে থাকবেন দৈনিক কালের কণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি মো: গোলাম মোস্তফা। উপজেলা চেয়ারম্যান সংবাদ কর্মীদের নিরলস দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করে সংবাদকর্মীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আরিফুজ্জামান এই ক্রান্তিকাল উত্তরনে সকল সংবাদ কর্মীদের ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।